ঢাকা ১২:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষকে রক্তের বন্ধনের শুভেচ্ছা রিডার্স ক্লাবের নিয়মিত পাঠচক্র অনুষ্ঠিত নকলায় চরাঞ্চলের কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী মাদারগঞ্জে বিধবা ইয়াসমিনের পাশে দাঁড়াল যুবদল, দিচ্ছে নতুন ঘর নিলাখিয়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তনের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ শেরপুরে ঘর-বাড়ি উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন শেরপুরে সালমান শাহ্ হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত শেরপুরে তিনটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন বাবার উত্তরসূরীরা সরিষাবাড়ী হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড , ডাক্তারের দূরদর্শিতায় প্রাণে বাঁচল প্রসূতি, নবজাতক

নকলায় চরাঞ্চলের কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী

নকলা : নিজের চাষ করা পানিফল সংগ্রহ করছেন নামাকৈয়াকুড়ি এলাকার কৃষক খোকন মিয়া। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নামমাত্র শ্রমে ও অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে পানিফলের চাষ। ফলটি সুস্বাদু হওয়ায় বেড়েছে জনপ্রিয়তা। সুস্বাদু এই ফলটি সহজে বাজারজাত করা যায়। পানি নিষ্কাশিত না হওয়া জলাবদ্ধ এলাকায় অন্যকোন আবাদ করা সম্ভব নয়। এমন পতিত জমিতে খুব সহজেই পানিফল চাষ করা যায়।

অল্প খরচে উৎপাদন বেশি ও লাভজনক হওয়ায় পানিফল চাষে ঝুঁকছে প্রান্তিক কৃষকেরা। জলাবদ্ধ জমিতেই এই ফলের চাষ হয়। ভোগান্তিও কম। ফলন বেশি পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় পানিফল চাষে কয়েকগুণ লাভ পাচ্ছেনা কৃষকেরা। এতে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এই ফল চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এখন বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক।গত দুই দশক ধরে নকলার চরাঞ্চলের কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক প্রান্তিক কৃষকদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা।

কৃষকেরা জানান, পানিফল মানুষের কাছে অতি পরিচিত। এটি স্থানীয়দের কাছে পানিসিংড়া নামে পরিচিত। জলাবদ্ধ পতিত জমিতে এই ফলের চাষ হয়। পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মতো বের হয়ে বংশ বিস্তার করে। শিকড়েই ফল ধারণ করে। এই ফল চাষে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। সার ও কীটনাশকের পরিমাণও কম লাগে। মূলত: বর্ষা মৌসুমেই পানিফল চাষ করা হয়।

এখন শুধু গ্রামে নয়। শহরের বাজারেও পানি ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধ জমিতে পানিফলের কাটিং করা চারা রোপণ করেন কৃষকেরা। আর অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত পানিফল উৎপাদন শুরু হয়। কৃষকেরা জানান, এ ফল চাষের জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডোবা, বদ্ধ জলাশয় বা মাছের ঘেরের মত সুবিধাজনক স্থান। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে পানিফল চাষ করা যায়। পানিফল গাছ কচুরিপানার মত পানির উপরে ভেসে থাকে। এর শেকড় থাকে পানির নিচে ও পাতা পানির উপরে ভাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ ও পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। নকলায় পানি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে।

ফলটির খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাস। কাঁচা ফলের এ নরম শাসটি খেতে বেশ সুস্বাদু। এর ইংরেজি নাম ডধঃবৎ পযবংঃহঁঃ ও উদ্ভিদতাত্তি¡ক নাম ঞৎধঢ়ধ নরংঢ়রহড়ংধ. তথ্য মতে, পানিফলের আদি নিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, উরফা, গণপদ্দী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বানিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করা হয়েছে। তবে পাঠাকাটা ইউনিয়নের কৈয়াকুড়ি, পলশকান্দি, দশকাহনিয়া, তাতড়াকান্দা ও নামা কৈয়াকুড়ি এলাকায় বেশি চাষ করা হয়েছে। এছাড়া চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, উরফা, গণপদ্দী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বদ্ধ জলাশয়ে ও পুকুরে পানিফল চাষ করা হয়েছে।

নামা কৈয়াকুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করছেন। প্রতি বছর এই গ্রামে ১০ থেকে ১৫ জন কৃষক পানিফল চাষ করেন। তাদের মধ্যে এবছর খোকন মিয়া ৩০ শতাংশ জমিতে, ইসলাম মিয়া ২৫ শতাংশ, আবুল হোসেন ৪০ শতাংশ, আনারুল ইসলাম ২০ শতাংশ, শাখাওয়াত হোসেন ২৫ শতাংশ ও আমির উদ্দিন ২০ শতাংশসহ অনেকেই পানিফল চাষ করেছেন।

কৃষক খোকন মিয়া বলেন, পতিত পুকুর ও ডোবা-নালায় বর্ষাকালে অল্প পরিমাণ পানি থাকে এমন নিচু জমিতে পানি ফলের উৎপাদন ভালো হয়। তবে প্রতিদিনই জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করতে হয়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে বীজ বা কাটিং করা গাছ রোপণ করা হয়। রোপণের তিন মাস পর থেকেই উৎপাদন শুরু হয়। ৩-৪ মাসিক প্রতিটি পানিফল গাছ হতে ৫-৬ বার ফল তোলা যায়। পানি যত বেশি হয় ফলন তত ভাল হয়।

নামা কৈয়াকুড়ি এলাকার বুলবল আহমেদ বলেন, এইফল চাষের ফলে নিচু পতিত জমি ও বদ্ধ জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন মৌসুমী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক প্রান্তিক চাষী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বা বাৎসরিক চুক্তি নিয়ে সেখানে পানিফল চাষ করে স্বাবলস্বী হয়েছেন। মাছ ও পানিফল বিক্রি করেই নামা কৈয়াকুড়ি এলাকার অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাছ ও পানিফল বিক্রির জন্য খাল-বিলের তীরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী বাজার। এসব বাজারে সস্তাফল হিসাবে পানিফল প্রচুর বিক্রি হয়। একবিঘা জমিতে পানিফল চাষে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকে। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে ও সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পেলে দেশের জলাবদ্ধ অনাবাদী ভ‚মিতে পানিফল চাষের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

খন্দকার দাওয়াখানার স্বত্বাধিকারী হাকিম খন্দকার জসিম উদ্দিন বলেন, পানিফলে পুষ্টিমানের পাশাপাশি ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগের উপশমকারী একপ্রকার ভেষজ ফল। তাছাড়া তলপেটের ব্যথা, পিত্তপ্রদাহ, উদরাময় ও ক্ষতিকর পোকার কামড়ে এর শাঁস প্রলেপ বেশ উপকারী। পাইকারি বিক্রেতা বাজু মিয়া, কাদির, হানি মিয়া ও মোতালেবের মত উপজেলাতে ৩০-৩৫ জন পাইকার ও ৮০ থেকে ৯০ জন খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এ ফল বিক্রি করে বছরের ৩-৪ মাসের সংসার খরচ চলে তাদের। এইফল আবাদের সঠিক পরিমাণের তথ্য না থাকলেও উপজেলাতে এ বছর প্রায় ১০০ একর জমিতে পানিফল চাষ করা হয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষক ও সাংবাদিক মোশারফ হোসাইন বলেন, আমরা দেখেছি, এখানে পানিফল চাষে আগের তুলনায় অনেক কৃষক ঝুঁকছে। গত মৌসুমে যে আয় এসেছে, তা আগের ধানের আয়ের থেকে অনেকগুণ বেশি। তাই বিষয়টি শুধু কৃষি উপাদান নয়। এক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের গল্প হয়ে উঠেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী এ প্রতিবেদককে বলেন, পানিফল রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় এটি নিরাপদ। জলাবদ্ধ যেসব জমিতে আমন ধান বা অন্যান্য আবাদ করা সম্ভব নয়। সেসব জমিতে পানিফল চাষ করে প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের দিনবদল করতে পারেন। যে কেউ জলাবদ্ধ পতিত জমিতে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষকে রক্তের বন্ধনের শুভেচ্ছা

নকলায় চরাঞ্চলের কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী

আপডেট সময় ১০:০৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

নামমাত্র শ্রমে ও অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে পানিফলের চাষ। ফলটি সুস্বাদু হওয়ায় বেড়েছে জনপ্রিয়তা। সুস্বাদু এই ফলটি সহজে বাজারজাত করা যায়। পানি নিষ্কাশিত না হওয়া জলাবদ্ধ এলাকায় অন্যকোন আবাদ করা সম্ভব নয়। এমন পতিত জমিতে খুব সহজেই পানিফল চাষ করা যায়।

অল্প খরচে উৎপাদন বেশি ও লাভজনক হওয়ায় পানিফল চাষে ঝুঁকছে প্রান্তিক কৃষকেরা। জলাবদ্ধ জমিতেই এই ফলের চাষ হয়। ভোগান্তিও কম। ফলন বেশি পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় পানিফল চাষে কয়েকগুণ লাভ পাচ্ছেনা কৃষকেরা। এতে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এই ফল চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এখন বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক।গত দুই দশক ধরে নকলার চরাঞ্চলের কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক প্রান্তিক কৃষকদের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা।

কৃষকেরা জানান, পানিফল মানুষের কাছে অতি পরিচিত। এটি স্থানীয়দের কাছে পানিসিংড়া নামে পরিচিত। জলাবদ্ধ পতিত জমিতে এই ফলের চাষ হয়। পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মতো বের হয়ে বংশ বিস্তার করে। শিকড়েই ফল ধারণ করে। এই ফল চাষে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। সার ও কীটনাশকের পরিমাণও কম লাগে। মূলত: বর্ষা মৌসুমেই পানিফল চাষ করা হয়।

এখন শুধু গ্রামে নয়। শহরের বাজারেও পানি ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধ জমিতে পানিফলের কাটিং করা চারা রোপণ করেন কৃষকেরা। আর অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত পানিফল উৎপাদন শুরু হয়। কৃষকেরা জানান, এ ফল চাষের জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডোবা, বদ্ধ জলাশয় বা মাছের ঘেরের মত সুবিধাজনক স্থান। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে পানিফল চাষ করা যায়। পানিফল গাছ কচুরিপানার মত পানির উপরে ভেসে থাকে। এর শেকড় থাকে পানির নিচে ও পাতা পানির উপরে ভাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ ও পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। নকলায় পানি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে।

ফলটির খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাস। কাঁচা ফলের এ নরম শাসটি খেতে বেশ সুস্বাদু। এর ইংরেজি নাম ডধঃবৎ পযবংঃহঁঃ ও উদ্ভিদতাত্তি¡ক নাম ঞৎধঢ়ধ নরংঢ়রহড়ংধ. তথ্য মতে, পানিফলের আদি নিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, উরফা, গণপদ্দী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বানিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করা হয়েছে। তবে পাঠাকাটা ইউনিয়নের কৈয়াকুড়ি, পলশকান্দি, দশকাহনিয়া, তাতড়াকান্দা ও নামা কৈয়াকুড়ি এলাকায় বেশি চাষ করা হয়েছে। এছাড়া চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, উরফা, গণপদ্দী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বদ্ধ জলাশয়ে ও পুকুরে পানিফল চাষ করা হয়েছে।

নামা কৈয়াকুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করছেন। প্রতি বছর এই গ্রামে ১০ থেকে ১৫ জন কৃষক পানিফল চাষ করেন। তাদের মধ্যে এবছর খোকন মিয়া ৩০ শতাংশ জমিতে, ইসলাম মিয়া ২৫ শতাংশ, আবুল হোসেন ৪০ শতাংশ, আনারুল ইসলাম ২০ শতাংশ, শাখাওয়াত হোসেন ২৫ শতাংশ ও আমির উদ্দিন ২০ শতাংশসহ অনেকেই পানিফল চাষ করেছেন।

কৃষক খোকন মিয়া বলেন, পতিত পুকুর ও ডোবা-নালায় বর্ষাকালে অল্প পরিমাণ পানি থাকে এমন নিচু জমিতে পানি ফলের উৎপাদন ভালো হয়। তবে প্রতিদিনই জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করতে হয়। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে বীজ বা কাটিং করা গাছ রোপণ করা হয়। রোপণের তিন মাস পর থেকেই উৎপাদন শুরু হয়। ৩-৪ মাসিক প্রতিটি পানিফল গাছ হতে ৫-৬ বার ফল তোলা যায়। পানি যত বেশি হয় ফলন তত ভাল হয়।

নামা কৈয়াকুড়ি এলাকার বুলবল আহমেদ বলেন, এইফল চাষের ফলে নিচু পতিত জমি ও বদ্ধ জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন মৌসুমী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক প্রান্তিক চাষী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বা বাৎসরিক চুক্তি নিয়ে সেখানে পানিফল চাষ করে স্বাবলস্বী হয়েছেন। মাছ ও পানিফল বিক্রি করেই নামা কৈয়াকুড়ি এলাকার অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাছ ও পানিফল বিক্রির জন্য খাল-বিলের তীরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী বাজার। এসব বাজারে সস্তাফল হিসাবে পানিফল প্রচুর বিক্রি হয়। একবিঘা জমিতে পানিফল চাষে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকে। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে ও সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পেলে দেশের জলাবদ্ধ অনাবাদী ভ‚মিতে পানিফল চাষের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

খন্দকার দাওয়াখানার স্বত্বাধিকারী হাকিম খন্দকার জসিম উদ্দিন বলেন, পানিফলে পুষ্টিমানের পাশাপাশি ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগের উপশমকারী একপ্রকার ভেষজ ফল। তাছাড়া তলপেটের ব্যথা, পিত্তপ্রদাহ, উদরাময় ও ক্ষতিকর পোকার কামড়ে এর শাঁস প্রলেপ বেশ উপকারী। পাইকারি বিক্রেতা বাজু মিয়া, কাদির, হানি মিয়া ও মোতালেবের মত উপজেলাতে ৩০-৩৫ জন পাইকার ও ৮০ থেকে ৯০ জন খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এ ফল বিক্রি করে বছরের ৩-৪ মাসের সংসার খরচ চলে তাদের। এইফল আবাদের সঠিক পরিমাণের তথ্য না থাকলেও উপজেলাতে এ বছর প্রায় ১০০ একর জমিতে পানিফল চাষ করা হয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষক ও সাংবাদিক মোশারফ হোসাইন বলেন, আমরা দেখেছি, এখানে পানিফল চাষে আগের তুলনায় অনেক কৃষক ঝুঁকছে। গত মৌসুমে যে আয় এসেছে, তা আগের ধানের আয়ের থেকে অনেকগুণ বেশি। তাই বিষয়টি শুধু কৃষি উপাদান নয়। এক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের গল্প হয়ে উঠেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী এ প্রতিবেদককে বলেন, পানিফল রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় এটি নিরাপদ। জলাবদ্ধ যেসব জমিতে আমন ধান বা অন্যান্য আবাদ করা সম্ভব নয়। সেসব জমিতে পানিফল চাষ করে প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের দিনবদল করতে পারেন। যে কেউ জলাবদ্ধ পতিত জমিতে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।