আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুরের তিনটি আসনে বিএনপি থেকে এবারও বাবার উত্তরসূরীরা পেলেন ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ওই তিন জনকেই বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছিল।
৩ নভেম্বর, সোমবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় সারাদেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রাথমিক মনোনয়ন প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় শেরপুর জেলার তিনটি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন তিনি। তাদের তিনজনের মধ্যে দু’জন সাবেক এমপি ও হুইপপুত্র এবং একজন রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়কের কন্যা।
তারা হলেন- শেরপুর-১ (সদর) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়ক মো. হযরত আলীর কন্যা ডাক্তার সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের দু’বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মরহুম জাহেদ আলী চৌধুরীর পুত্র প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী এবং শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম ডাক্তার সিরাজুল হকের পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
এই তিনজন প্রার্থীর মধ্যে বিগত ১৭ বছর আওয়ামী দুঃশাসনের সময় সবচেয়ে বেশি মামলা, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেল। তিনি নির্বাচনের দিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলনে মাঠেই দাঁড়াতে পারেননি। তারপরও তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিছিল, সভা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এরপর শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ডাক্তার সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা ২০১৮ সালের নির্বাচনের দিন আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন। এ সময় তার গাড়ি ভাঙচুর, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের পুলিশি হামলা-মামলার শিকার হতে হয়।
শেরপুর-৩ আসনের প্রার্থী প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী ও তার মা ফরিদা চৌধুরী বিগত দুঃশাসনের সময়ে তার নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করতে চাইলেও পরিবেশ পরিস্থিতি অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের প্রতি তার বাবা মরহুম জাহেদ আলী চৌধুরীর অবদানের কারণেই উত্তরসূরী হিসাবে হয়ত তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।
তবে ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর থেকে উল্লেখিত তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে নিজেদের সফল করতে ব্যাপক গণসংযোগ, নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড, সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক, পথসভা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন।
শেরপুর-৩ আসন থেকে মাহমুদুল হক রুবেলের বাবা ডাক্তার সেরাজুল হক ১৯৭৯-১৯৮৩ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জামালপুর-৮ (শেরপুর ছিলো তৎকালীন জামালপুর জেলার অধীনে) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর ১৯৯১-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে ১৯৯৫ সালের ৫ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে তার ছেলে মো. মাহমুদুল হক রুবেল বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি।
মুগনিউর রহমান মনি : নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম 
















