জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি-যুবদল কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর, ককটেল নিক্ষেপ, নেতাকর্মীদের নির্যাতন, বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে ২ অক্টোবর বুধবার বকশীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। স্থানীয় বিএনপিনেতা মো. আনিছুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার ওরফে বাবুল তালুকদারসহ ১৩৯ জনের নামে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের দিন সন্ধ্যায় ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদরকে জামালপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী উপজেলার মাদারেরচর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে বিএনপি নেতা মো. আনিছুজ্জামানের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে যখন স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার এ সময় মামলায় উল্লেখিত আসামি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ৪ আগস্ট দুপুরে একত্রিত হয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও যুবদল কার্যালয়ে হামলা করে ভাংচুর চালায়। তারা হকিস্টিক, রাম দা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারপিট করে এবং বিএনপি কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণসহ অগ্নিসংযোগ করে। পরে হামলাকারীরা ধর ধর শিবির ধর ও ধর ধর ছাত্র ধর শ্লোগান দিতে দিতে বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের দিকে যায়। তারা মালিবাগ মোড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনিকের লাইব্রেরিতে আগুন দেয় এবং কলেজ রোডে বেশকটি দোকান তছনছসহ বেশকিছু যানবাহন ভাংচুর করে। পরে বেলা ২টার দিকে তারা উপজেলা পরিষদে ঢুকে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুম প্রামাণিক নিজেই তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর চালায় তারা।
এরপর তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি করে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বকশীগঞ্জ হাইওয়ে থানায় ঢুকে হাইওয়ে থানার গাড়ি ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় বলে এসব মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন।
মামলাটির আসামিরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম, সহ-সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন, সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল, সহ-সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন সাকা, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার ওরফে বাবুল তালুকদার, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আগা সাইয়ুম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান হিটলার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. আলমগীর কবির আলমাস চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. মোফাজ্জল হোসেন, সদস্য বাট্টাজোড় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোখলেছুর রহমান তালুকদার ওরফে জুয়েল, সদস্য মশিউর রহমান লাখপতি, সদস্য ও জেলা পরিষদ সদস্য শিলা সারোয়ার, উপদেষ্টা প্রকৌশলী নুরুল আমিন ফোরকান, উপজেলা তাঁতী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব বিল্লাহ, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জুমান তালুকদার, সাবেক সহ-সভাপতি আবু জাফর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তার, সাবেক সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল আলম বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামসহ ১৩৯ জন। এছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে এ-ই মামলায়।
তাদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন, সদস্য আবু তালেব তোতা, সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মনির, আলতাফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন লুলু ও নুর আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার ছয়জন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।