জামালপুর জিলা স্কুলের ছাত্র পাপ্পনকে হত্যার চেষ্টা, বিচার চায় দরিদ্র বাবা-মা

মা পারুল আক্তারের সাথে ভুক্তভোগী ছেলে পাপ্পন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

বড় পানির ট্যাংকের ভেতরে আটক রেখে জামালপুর জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. পাপ্পনকে (৮) হত্যার চেষ্টার ঘটনায় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর জামালপুর সদর সিআর আমলি আদালতে দাখিলকৃত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়েছে আদালত। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা জামালপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদৎ হোসেন তার তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে গত সাড়ে তিন মাসেও জমা না দেওয়ায় বাদী ভুক্তভোগী শিশুটির দরিদ্র বাবা মো. জুয়েল মিয়া মামলাটির বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মামলাটির বাদী মো. জুয়েল মিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দিন মজুরির কাজ করে সংসার চালান। তার বাড়ি জামালপুর পৌরসভার মাইনপুর গ্রামে। তার স্ত্রী পারুল আক্তার উন্নয়ন সংঘের জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রামের ইউজিপি কার্যক্রমের মুক্তির আলো হতদরিদ্র দলের একজন সদস্য। গত বছর তাদের ছেলে মো. পাপ্পন (৭) জামালপুর জিলা স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। চলতি বছর সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

প্রতিবেশী মো. আবেদ আলীর ছেলে মো. লাভলু মিয়ার সাথে বসতবাড়ির জমিজমাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে শত্রুতা ও মনোমালিন্য চলে আসছে শিশু পাপ্পনের বাবা জুয়েল মিয়ার সাথে। গত বছরের ১১ নভেম্বর সকাল থেকেই জুয়েল মিয়া পেশাগত কাজের কারণে বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে পূর্বশত্রুতার জের ধরে মো. লাভলু মিয়া কৌশলে তার মেয়ে লামিয়া আক্তারের মাধ্যমে জুয়েল মিয়ার ছেলে মো. পাপ্পনকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় বেলা ১১টার দিকে লাভলু মিয়া ও তার স্ত্রী রিতা বেগম এবং তার চাচাত ভাই দেলোয়ার হোসেনরা যোগসাজস করে শিশু পাপ্পনকে লাভলু মিয়ার বাসার ভবনের বড় পানির ট্যাংকে আটক রেখে হত্যার চেষ্টা চালান।

এরই মধ্যে শিশু পাপ্পনকে খুঁজে না পেয়ে জুয়েল মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তার লাভলু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার মেয়ে লামিয়া আক্তারকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। এরই মধ্যে সরকারি জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে ফোন দিলে লাভলু মিয়া, দেলোয়ার হোসেন ও রিতা বেগম ভয় পেয়ে যান। ট্রিপল নাইনে ফোনের প্রেক্ষিতে জামালপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল লাভলু মিয়ার বাড়িতে পৌঁছার আগেই তারা বাড়িতে বাথরুমের ছাদে থাকা পানির ট্যাংকের ভেতর থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশু পাপ্পনকে বের করে দেয়। দীর্ঘক্ষণ পানির ট্যাংকের ভেতরে থাকায় শিশু পাপ্পনের সারা শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যায়। খবর পেয়ে জুয়েল মিয়া দ্রুত বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে পাপ্পনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করান। হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসায় সেই যাত্রায় শিশু পাপ্পন বেঁচে গেলেও এখনো তার চিকিৎসা চলছে। শিশু পাপ্পনের মাথা ঘোরায়, ব্যথা করে, আবুল তাবুল করে, পড়া মনে থাকে না এবং তার হাত-পায়েও ব্যথা করে।

এ ঘটনায় দরিদ্র জুয়েল মিয়া বাদী হয়ে পাপ্পনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মো. লাভলু মিয়া, তার স্ত্রী রিতা বেগম ও তার চাচাত ভাই দেলোয়ার হোসেনকে বিবাদী করে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়েরের উদ্দেশে অভিযোগ দেন। কিন্তু সদর থানা পুলিশ তার অভিযোগটি নথিভুক্ত করেনি। এতে জুয়েল মিয়া সদর থানা পুলিশের প্রতি হতাশ হয়ে ঘটনার একমাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর জামালপুর সদর সিআর আমলি আদালতে ওই তিনজনকে বিবাদী করে অভিযোগ দাখিল করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানজিনা আক্তার বাদী জুয়েল মিয়ার অভিযোগ আমলে নিয়ে জামালপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে নিজস্ব মতামত সম্বলিত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার আদেশ জারি করেন গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। কিন্তু বিগত সাড়ে তিন মাসেও ওই তদন্ত কর্মকর্তা তার তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা না দেওয়ায় মামলাটির বাদী জুয়েল মিয়া তার ছেলেকে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জুয়েল মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশও আমার মামলা নেয়নি। এদিকে আদালতেও যদি এতো সময় লাগে তাহলে আমি কোথায় যাবো। আমার ছেলে পাপ্পনের শরীর এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হয় নাই। এখনো তার চিকিৎসা চলছে। তাকে হত্যার চেষ্টার ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই। ভুক্তভোগী শিশুটির মা পারুল আক্তারও এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।

জামালপুর জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. পাপ্পনকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগের সরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে এতো সময় লাগছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জামালপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদৎ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারি পেশাগত অনেক দায়িত্ব পালনে ব্যস্ততার কারণে ঘটনাটি তদন্ত করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে আমি ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ের তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। অভিযোগের বাদী ও বিবাদী পক্ষসহ স্থানীয় প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করেছি। চলতি মাসে বাদীর অভিযোগের শুনানির দিনতারিখ ধার্য্য রয়েছে আদালতে। তার আগেই আমি তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিয়ে দিবো।