শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ড. ইউনূসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :

গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা জনাকীর্ণ আদালতে ১ জানুয়ারি এ রায় দেন।

শ্রম আইনে এ মামলায় পৃথক দুটি ধারায় আদালত সাজা প্রদান করেন। একটি ধারায় মামলায় ড. ইউনূসসহ চার আসামিকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাচঁ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের জেল দেওয়া হয়েছে। অপর একটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের জেল দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়।

রায় ঘোষণার পরপরই আপিল শর্তে জামিন আবেদন করে আসামিপক্ষ। আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এ আবেদন দাখিল করেন। আদালত আপিল শর্তে আসামিদের একমাসের জামিন দিয়ে আদেশ দেন।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এ মামলায় আনীত অভিযোগ তারা প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

রায় ঘোষণার প্রাক্কালে আদালত বলেন, রায়টি ৮৪ পৃষ্ঠার। এরমধ্যে রায়ের সংক্ষিপ্তসার আদালতে উপস্থাপন করা হবে। সে অনুযায়ি রায় ঘোষণা করা হয়।

রায় ঘোষণার সময় ড. ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তার পক্ষে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর উভয়পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষে ১ জানুয়ারি রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। মামলায় গত ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেন। শ্রম আদালতে ২২ আগস্ট এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন।

মামলায় বলা হয়, শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।

অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়। আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।

আজ রায়ে আদালত বলেন, আনীত অভিযোগের স্বপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষ্য ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণ দিয়েছেন তা যথাযথ। মামলায় আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।