র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার শিশু নুসরাত হত্যায় জড়িত পলাতক দুই আসামি

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার দুই আসামি আবুল কাশেম ও সবুজ মিয়া। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে চার বছরের শিশু নুসরাত জাহানকে হত্যার পরও জীবিত ফেরত দেওয়ার কথা বলে দেড়লাখ টাকা দাবি করার অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে প্রকৃত দুই হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল। ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে র‌্যাবের জামালপুর ক্যাম্প কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লোমহর্ষক এই শিশু হত্যার ঘটনা পরবর্তী অভিযানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন র‌্যাব জামালপুরের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাঘারচর বেপারী পাড়ার মাছ বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে সাংসারিক বাজার করার জন্য স্থানীয় বাঘারচর বাজারের যাওয়ার সময় তার চার বছরের শিশু সন্তান নুসরাত জাহান হাবিবা বাজার থেকে মজা (খাবার) খেতে চায়। তিনি নুসরাতকে নিয়ে বাড়ির কাছে ছমিরের দোকান থেকে দুটি সিঙ্গারা কিনে সকাল ৮টার দিকে নুসরাতকে বাড়ির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন। পরে তিনি বাঘারচর বাজারে চলে যান। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে গিয়ে জানতে যারে নুসরাত বাড়িতে আসেনি। খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে মেয়ের নিখোঁজের বিষয়ে পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর দেওয়ানগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন আশরাফুল ইসলাম। থানায় সাধারণ ডায়েরির পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নিজ বাড়ির উঠানে নুসরাতের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্বজনরা। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেছে।

এদিকে লাশ উদ্ধারের আগে একই উপজেলার ডাংধরা পারোহারি গ্রামের আবুল কাশেম ওরফে শিয়ালের ছেলে ট্রলির হেলপার সবুজ (২২) ও তাদের ট্রলি চালক রুবেলের (৩৩) একটি মোবাইল অডিও রেকর্ড পুলিশের হাতে আসে। সেই অডিওতে রুবেল নাকি তাকে দেড় লাখ টাকা দিলে নুসরাতকে জীবিত ফেরত দিতে পারে। নুসরাতের লাশ পাওয়া যাওয়ার পর পুলিশ এই অডিওর সূত্র ধরে ট্রলিচালক রুবেলকে আটক করে। এরপর থেকেই সবুজ ও তার বাবা আবুল কাশেম পলাতক ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ওই ঘটনাটি ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর নুসরাতের বাবা আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে দেওয়ানগঞ্জ থানায় একটি অপহরণসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনার পর র‌্যাবের জামালপুর ক্যাম্পের প্রতিনিধি ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রাখে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সন্দেহভাজন পলাতক দুই আসামিকে ঘটনার মামলা দায়েরের ছয়দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামানের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পলাতক আসামি সবুজ মিয়াকে তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আবুল কাশেমকে ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া একটার দিকে কুড়িগ্রাম জেলার দুশমারা থানা এলাকা থেকে আটক করতে সক্ষম হয়।

র‌্যাবের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে গ্রেপ্তার আসামি মো. সবুজ জানিয়েছেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে ভিকটিম শিশু নুসরাত জাহান হাবিবাকে তার বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় দেখতে পান। সেখানে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কৌশলে ভিকটিমকে কোলে করে রাস্তার পাশের জঙ্গলে নিয়ে যান। সেখানে ভিকটিমকে মুখ চেপে ধরে তাকে নির্মমভাবে প্রহার করেন। পরবর্তীতে সবুজের বাবা মো. আবুল কাশেম ভিকটিমের শরীরে ছোট পানির বোতলে ব্যাটারির পানি ভরে পানির পাইপ দিয়ে ভিকটিমের শরীরে ঢেলে দেন। এরপর তারা ভিকটিমকে পুকুরে ফেলে দিয়ে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয়। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য পর দিন ১০ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান ৩টার দিকে ভিকটিমের বাড়ির আঙ্গিনায় লাশ রেখে চলে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৪, সিপিসি-১ জামালপুরের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ধৃত আসামি মো. সুবজ মিয়া এই অমানবিক ও লোমহর্ষের ঘটনার বর্ণনা দেয়। ওই হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব শত্রুতার জেরে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটককৃত আসামিদ্বয়কে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানায় সূত্রোক্ত মামলা মোতাবেক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।