অখ্যাত ভনড্রুসোভার হাতে উঠলো উইম্বলডনের শিরোপা

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : প্রথম অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে উইম্ভলডন নারী এককের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মার্কেটা ভনড্রেুসোভা। চেক প্রজাতন্ত্রের ভনড্রুসেভা ১৫ জুলাই ফাইনালে ওনাস জাবেরকে ৬-৪, ৬-৪ গেমের সরাসরি সেটে পরাজিত করে গ্র্যান্ড স্ল্যামের প্রথম শিরোপা জয় করেছেন। এর মাধ্যমে আরো একবার হতাশ হতে হলো গত বছরের ফাইনালিস্ট তিউনিশিয়ার জাবেরকে।

উইম্বলডনের ৬০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত অবাছাই নারী খেলোয়াড় হিসেবে ভনড্রুসোভা ষষ্ঠ র‌্যাঙ্কধারী জাবেরকে পরাজিত করলেন। ২৪ বছর বয়সী ভনড্রুসোভা আন্ডারডগ হিসেবেই ফাইনালে খেলতে নেমেছিলেন। ক্যারিয়ারে এনিয়ে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে খেললেন তিনি। এর আগে ২০১৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে এ্যাশলে বার্টির কাছে পরাজিত হয়ে রানার্স-আপ শিরোপা নিয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল।

২০২২ সালের পুরোটা কব্জির ইনজুরির কারনে কোর্টের বাইরে থাকা ভনড্রুসোভা শিরোপা জয়ের পর বলেছেন, ‘সব কিছুর পরেও আমি মানসিক ভাবে শক্ত ছিলাম। গত বছর কোন টুর্নামেন্টে খেলতে পারিনি। আর এখন আমার হাতে শিরোপা, যা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি জানি না এই মুহূর্তে কি হয়ে গেল।’

একমাত্র চেক নারী হিসেবে এর আগে উইম্বলডনের শিরোপা জিতেছিলেন পেট্রা কেভিতোভা। দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে দেশকে গর্বিত করলেন ভনড্রুসোভা। গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্ণামেন্টে নবম আবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জিতলেন।

একের পর এক ইনজুরির কারনে প্রতিশ্রুতিশীল ক্যারিয়ার যখন হুমকির মুখে পড়ে ঠিক তখনই এমন একটি শিরোপা জয় ভনড্রুসোভাকে অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যাবে। মাত্র বছর খানেক আগে উইম্বলডনের ঠিক আগ মুহূর্তে ইনজুরিতে পড়ে তার আর খেলা হয়নি। তার স্থানে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিরিয়াম কোলোজেইজোভা মূল ড্র’তে জায়গা করে নেন। দ্বিতীয়বারের মত কব্জির অস্ত্রোপচারের কারনে অলিম্পকে রৌপ পদক বিজয়ী এই খেলোয়াড়কে ছয় মাসের জন্য কোর্ট থেকে ছিটকে দেয়। যদিও ইনজুরির কারনে এই বিশ্রাম তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সময় করে দিয়েছিল।

২০১৮ সালে ১৮১তম র্যা ঙ্কে থেকে উইম্বলডনের ফাইনালে খেলা সেরেনা উইলিয়ামসের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন র‌্যাঙ্কে থেকে গতকাল ভনড্রুসোভা ফাইনালে খেলেছেন। ভনড্রুসোভা নিজেকে নিয়ে এতটাই আশাহত ছিলেন যে স্বামী স্টিপান সিমেককে পর্যন্ত লন্ডনে আসতে দেননি। এখানে এসে খেলা দেখার পরিবর্তে প্রাগের বাড়িতে প্রিয় পোষা বিড়াল ফ্র্যাংকিকে দেখশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন সিমেককে। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল দেখতে অবশ্য সিমেক অল ইংল্যান্ড ক্লাবে এসেছিলেন।

এদিকে আরো একবার ফাইনালে পরাজিত হয়ে রানার্স-আপ ট্রফি নেবার সময় বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন জাবের। প্রথম আরব নারী খেলোয়াড় হিসেবে গত বছর উইম্বলডনে খেলেছিলেন জাবের। কিন্তু তিন সেটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত এলিনা রিবাকিনার সাথে পেরে উঠেননি। কয়েক সপ্তাহ পর ইউএস ওপেনের ফাইনালে ইগা সোয়াইটেকের কাছে পরাজিত হয়ে আবারো হতাশ হতে হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাবের বলেছেন, ‘দিনটা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ম্যাচ ছাড়িনি। ক্যারিয়ারে এর থেকে হতাশাজনক পরাজয় এ পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি একদিন ঠিকই সবকিছু করে দেখাবো।’

এবারের ফাইনালের পথে জাবের চারজন সাবেক গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ীতে পরাজিত করেছেন। এ বছর দুইবার অবশ্য ভনড্রুসোভার কাছে দুইবার পরাজিত হয়েছেন জাবের। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও মিয়ামিতে জাবেরকে হারের স্বাদ পেতে হয়েছিল। বাঁ-হাতি চেক খেলোয়াড়ের সামনে কালও পেরে উঠেননি। প্রথম সেটের দ্বিতীয় গেমে জাবের প্রথম ব্রেক পয়েন্ট তুলে নেন। কিন্তু পরের গেমেই ভনড্রুসোভা ভুল শুধরে ব্রেক পয়েন্ট নিজের করে নেন। ৫-৪ গেমে এগিয়ে থাকার পর ভনড্রুসোভা সহজেই প্রথম সেট জয় করেন। দ্বিতীয় সেটেরর প্রথম গেমেই জাবেরের দূর্বল ফোরহ্যান্ডের সুযোগে ব্রেক পয়েন্ট অর্জন করেন ভনড্রুসোভা। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ ম্যাচে জয় তুলে নেন ভনড্রুসোভা। পরের তিন গেমে দুটি ব্রেক পয়েন্ট নিশ্চিত করে জাবের ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যান। আবারো নবম গেমে ভুল করে বসায় ভনড্রুসোভা সেট পয়েন্টের কাছাকাছি পৌঁছে যান। কিন্ত পরের গেমেও আর শেষ রক্ষা হয়নি। ভনড্রুসোভার কাছে সরাসরি সেটে হেরে আবারো হতাশ হতে হয় জাবেরকে।