সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না বলে কষ্ট পাই : মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: সাগর-রুনি থেকে গোলাম রাব্বানী নাদিম পর্যন্ত যত সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়েছে আজ পর্যন্ত কোনটারই দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয় নাই বলে আমরা কষ্ট পাই। মানবাধিকার কমিশন লজ্জা বোধ করে। অপ্রত্যাশিত এবং নির্দয়ভাবে নাদিম সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হবার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আমরা নাদিমের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে এবং সরেজমিনে দেখতে ঢাকা থেকে জামালপুর ছুটে এসেছি। এ হত্যার ঘটনা সংঘটিত হবার পরই আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তারা এ নির্মম ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমাকে আশ্বস্ত করেছে। এ পর্যন্ত পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গৃহীত পদক্ষেপে আমরা সন্তুষ্ট। দল থেকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত যথার্থ হয়েছে। ২০ জুন জামালপুরে জেলা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও অন্যান্য সুধীমহলের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

গত ১৪ মে সাংবাদিক নাদিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলা এবং পরদিন চিকিৎসধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, কমিশনারসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি দল সরেজমিনে বকশীগঞ্জে নিহত নাদিমের শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা এবং কবর জিয়ারত শেষ জামালপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আরফান আশিক, উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক, জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইনজীবী মুহম্মদ বাকী বিল্লাহ, পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি ও উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আইনজীবী ইউসুফ আলী, সদস্য শাহজামাল প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোক্তার হোসেন।

সভায় কমিশনের পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের নিজেদের স্বার্থেই আন্দোলনে পথে থাকতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সাংবাদিকদের পাশে থাকবে।

মতবিনিময় সভা।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, নির্ভিক সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মৃত্যুতে আমরা সবাই শেকাহত। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এ হত্যাকান্ডকে ঘীরে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানীর শিকার না হন এ ব্যাপারে তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানান।

পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ডে আমরা ভীষণভাবে মর্মাহত হয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে চার্জসিট দেওয়া হবে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ এতটুকু কার্পণ্য করবে না।

মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘হত্যার জন্য নয়, সতর্ক করার জন্য হামলা করা হয়েছিল’- এ বক্তব্যটা যখন দিয়েছি তখন আমাদের হাতে কেবল সিসি ক্যামেরার ফুটেজটাই ডকুমেন্ট হিসেবে ছিল। হামলাকারীদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। কিল, ঘুষির মধ্যেই ছিল তারা। পরবর্তীতে অধিক তদন্তে বেরিয়ে আসে হামলাকারীদের নির্মমতা। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি। বাকী আসামিরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার হবে ইনশাল্লাহ। পুলিশ সুপার সকলের সহায়তা কামনা করেন।