জামালপুরে ভিডিসির অভিনব উদ্যোগ: নবজাতকের জন্য গাছের চারা

নবজাতকের পরিবারের হাতে গাছের চারা তুলে দেন গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সদস্যগণ।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বিশেষ প্রতিনিধি: ‘বৃক্ষ তুমি ফল, ফুল আর/সবুজে ভরাবে দেশ, তোমার ছায়া-মায়ায় বাড়বে/শিশুর কায়োমনও বেশ।’ কবিতার মতো সুদূর চিন্তা থেকে জামালপুরে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি (ভিডিসি) এলাকায় কোন শিশুর জন্ম হলেই সেই পরিবারে উপহার হিসেবে প্রদান করছে একটি ফল ও একটি কাঠ গাছের চারা। তাদের উদ্দেশ্য একটাই শিশুটি বেড়ে উঠার সাথে সাথে গাছটিও বড় হবে। ফল গাছ পুষ্টি চাহিদা মিটাবে আর কাঠ গাছ ২৫ বছর পর আর্থিক চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়া এলাকায় বনায়ন সৃষ্টি করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। অভিনব এ উদ্যোগ শুরু হয়েছে জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর ও শরিফপুর ইউনিয়নে। জামালপুর পৌরসভাতেও এ কার্যক্রম নেয়া হবে বলে জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম সূত্রে জানা যায়।

লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সম্প্রতি এলাকায় জন্ম নেয়া ২০ শিশুর পরিবারের হাতে ৪০টি চারা উপহার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গাছের চারাগুলো রোপন ও পরিচর্যার কাজও চলছে।

লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন উন্নয়ন সংঘ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রামের পরামর্শে আমরা প্রথমে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করি। নতুন কিছু করার চিন্তা থেকে আমরা নবজাতকের পরিবারে গাছের চারা উপহার দেওয়ার উদ্যোগ নেই। আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে এ কাজটি করছি। আমরা নতুন শিশু জন্ম নেয়ার সাথে সাথেই গাছের চারা পৌছে দিচ্ছি। আমাদের কাছে এলাকার সকল গর্ভবতীর তালিকা এপির মাধ্যমে সংগ্রহ করা আছে।

নবজাতকের পরিবারের হাতে গাছের চারা তুলে দেন গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সদস্যগণ।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

একই এলাকার নবজাতক শিশু সাউদার বাবা সোহাগ মিয়া বলেন, গাছ দুইডা পায়্যা আমরা খুশি হইছি। গাছ বাইড়ে উঠার নগে নগে আমাগো বেটিও বড় অবো। গাছ দুইডা আঙ্গরে মাইয়াডার পুঞ্জি।

নবজাতক ইব্রাহিমের মা বন্যা লজ্জানবত সুরে বলেন, আল্লায় আমাগো পুলাডার লাহান গাছ দুইডারও য্যান বাচাইয়ে রাহে।

উন্নয়ন সংঘের এপি ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন বলেন, গ্রাম উন্নয়ন কমিটির এ ধরনের কাজে আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। কমিউনিটি বা এলাকার লোকজন বিশেষ করে ভিডিসির নেতৃত্বে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যে ইনভেস্ট করছে এর ধারাবাহিকতা থাকলে সত্যিই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই। বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগ বিশাল ভূমিকা রাখবে।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের এপি ব্যবস্থাপক সাগর ডি কস্তা বলেন, জামালপুরে এরিয়া প্রোগ্রাম কাজ পরিচালনার শুরু থেকেই নতুন নতুন ধারণায় বহুমাত্রিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এলাকায় গেলেই অভিনবত্ব লক্ষ্য করা যায়। এধরনের উদাহরণযোগ্য কাজ আগামীতে আরো বাড়বে।

জানা যায়, এরিয়া প্রোগ্রামটি জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, শরিফপুর ইউনিয়ন এবং জামালপুর পৌরসভার ১, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩৯টি গ্রামে ২৩ হাজার ২৮২ জন উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। কর্মসূচির সকল কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার্যক্রমের মধ্যে জীবিকায়ন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ওয়াস এবং স্পন্সরশীপ অন্যতম। এরমধ্যে আবার খানা জরিপ, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ সম্মত গ্রাম প্রতিষ্ঠা, জিঙ্ক ধান উৎপাদন, অতিদারিদ্রের উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দল গঠন, সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো, প্রসবপূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিপদাপন্ন শিশুর তালিকা তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে হংকং।