দেওয়ানগঞ্জে ভুট্টার দাম কম, কৃষকের মাথায় হাত

দেওয়ানগঞ্জের বাশতুলী এলাকায় ভুট্টা মাড়াই করছে ভুট্টাচাষীরা।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বিল্লাল হোসেন মন্ডল, দেওয়ানগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক বছর ধরে ধান ও পাট চাষের পাশাপাশি ভুট্টা চাষ করে আসছে কৃষকরা। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীসহ বিপুল পরিমাণে ভুট্টা চাষ করেছে কৃষকরা।

ধান চাষের চেয়ে খরচ ও রোগবালাই কম আবার ফলনও বেশি হওয়ায় বেশি লাভের স্বপ্ন দেখেছিল এলাকার ভুট্টা চাষীরা। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। সেই সাথে বাম্পার ফলনও হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ভুট্টার দাম কমে যাওয়ায় মুখে হাসি নেই ভুট্টা চাষীদের। মৌসুমের শুরুতে যে ভুট্টার বাজার ছিল মণ প্রতি ১১শ-১২শ টাকা। হঠাৎ সে দর ৩শ-৪শ টাকায় নেমে আসায় ভুট্টা চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। অধিক লাভের প্রত্যাশায় চাষীরা মোটা অংকের ঋণ এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে ভুট্টা চাষ করেছিল। ন্যায্য মুল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে ভুট্টা চাষীরা।

জানা গেছে, সরকারিভাবে ভুট্টার কোনো মূল্য নির্ধারণ কিংবা ভুট্টা কেনার উদ্যোগ না থাকায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ করে চাষীদের উৎপাদিত ভুট্টা নাম মাত্র মূল্যে কিনছেন। ভুট্টা ক্রয়কারী কোম্পানিগুলো কৃষককে জিম্মি করে কম মূল্যে ভুট্টা ক্রয় করছে বলেও অভিযোগ কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। অথচ চাষ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি। এসব জমিতে গড়ে ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৩ মেট্রিক টন ভুট্টা। মৌসুমের শুরুতে যে ভুট্টার বাজার দর ছিল মণ প্রতি ১১শ-১২শ টাকা। হঠাৎ সে দর ৩’শ থেকে-৪শ টাকায় নেমে আসায় ভুট্টা চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ ৮ ইউনিয়নে ভুট্টার ব্যাপক ফলন হলেও দাম নিয়ে হিমশিমে রয়েছে কৃষক। ভুট্টার বাজারদর কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার ভুট্টাচাষীরা।

সরেজমিনে গেলে উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়নের বাঁশতলি এলাকার আব্দুল মান্নান জানান, ১ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। বীজ, সার, পানি ও মাড়াই মিলে ১ বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৩৭ হাজার টাকা। ওই জমি থেকে তিনি ভুট্টা পেয়েছেন ৪০ মণ যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩২ হাজার টাকা। লাভের আশায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ভুট্টা চাষ করায় তিনি লোকসান গুণছেন ৫ হাজার টাকা। এখন তিনি কী করবেন?

বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ভুট্টাচাষী তারেক মাহমুদ জানান, তিনি ৩০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। তার জমিতে ফলন ভাল হওয়ায় কোন রকমে খরচের টাকা উঠেছে। ভুট্টার দর সরকারিভাবে নির্ধারণ করার জন্য দাবি করেছেন তিনি।

ভুট্টাচাষীদের জন্য সরকারি প্রণোদনা কিংবা স্থায়ী বাজার ব্যবস্থার দাবিও জানান তিনি।

লাভের আশার ভুট্টা চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাহাদুরাবাদ এলাকার কৃষক জাবেদ মিয়া, আনার আলী, আবুল কালাম, সামাদ মিয়া জানান, বর্তমান বাজার দামে ভুট্টা বিক্রি করলে পুঁজি উঠানো সম্ভব না, এমনটাই দাবি করছে কৃষক।

সরদার পাড়া এলাকার ইউনুছ মিয়া জানান, ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে কোনো রকম খরচ উঠবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আলমগীর আজাদ জানান, উপজেলার কৃষকরা এ বছর ভুট্টা চাষের প্রতি বেশি ঝুঁকে ছিলেন। অন্যান্য আবাদের থেকে খরচ কম হওয়ায় লাভের আশায় ভুট্টা চাষ করেছিলেন। উপজেলায় চাহিদার তুলনায় ভুট্টা বেশি চাষ হওয়ায় দাম কমেছে।