প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বললেন, ‘মামলার জট কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি’

‘ন্যায়কুঞ্জ’ ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উম্মোচন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব হলো বিচার বিভাগকে গতিশীল করা। সেই লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি। মামলার অনেক জট। লাখ লাখ মামলা। সারাদেশে প্রায় ৩৫ লাখ মামলা পেন্ডিং আছে। মামলার জট কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। মামলা থাকবে। মামলা তো আর শেষ হবে না। তাহলে তো আদালত আর লাগবে না। মামলা থাকলেও বিচারপ্রার্থীরা যাতে আদালতের বারান্দায় না ঘোরে সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

২৭ এপ্রিল দুপুরে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মিতব্য বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’র ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উম্মোচন শেষে সাংবাদিক ও সুধীজনের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আদালত হচ্ছে বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণের জন্য। আদালত প্রাঙ্গণে তাদের জন্য বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন সরকার। সারাদেশে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ স্থাপনের জন্য সরকার আমাদেরকে ৩৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। আমরা আশা করি ৬৪ জেলাতেই ‘ন্যায়কুঞ্জ’ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। বিচারপ্রার্থী যারা আসেন তাদের মধ্যে অনেক মহিলারাও আসেন। তারা অনেক দূর দূরান্ত থেকে আসেন। তাদের বসবার জায়গা নাই। টয়লেট নাই। ন্যায়কুঞ্জে পুরুষদের জন্য একটা ও মহিলাদের জন্য একটা টয়লেট করে দিবো। বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকবে। ফাস্টফুডের দোকানও থাকবে। সেই দোকানে কাগজ, কলমসহ আদালতের ব্যবহারযোগ্য পণ্যের পাশাপাশি ফাস্টফুডও বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে। সেই দোকান থেকে যা আয় হবে সেই টাকায় ন্যায়কুঞ্জ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খাতে ব্যয় করা হবে। ন্যায়কুঞ্জ স্থাপিত হলে আমার মনে হয় মানুষ আদালতে এসে স্বস্তি পাবে।

‘ন্যায়কুঞ্জ’ ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উম্মোচন শেষে সেখানে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধ:স্তন বিচার বিভাগে এ বছরও ১০২ জন নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য রয়েছে। তাদেরকে নিয়োগ দিয়ে দিতে পারলে আমাদের দুই হাজার বিচারকের সাথে ১০২ জন যোগ হবে। আরও ১০০ জন বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্তের দিকে রয়েছে। এবছরের শেষের দিকে অথবা সামনের বছরের প্রথমদিকে তাদেরকে নিয়োগ দিতে পারবো। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে আমাদের মামলার নিষ্পত্তির হার হয়তো আরও বাড়বে। আমরা আশাবাদী। হতাশ নই। আমরা পরিশ্রম করেই মামলার জট খুলতে চাই। আমার বিশ্বাস আমরা সফল হবো।

সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। প্রত্যেকটা জাজমেন্ট ওয়েব সাইটে চলে আসবে। এ নিয়ে কয়েকটা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটা ক্লিক করলেই, এমনকি ইংরেজিতে লেখা জাজমেন্টও বাংলায় অনুবাদ হয়ে আপনাদের সামনে চলে আসবে। প্রত্যেক জেলাতেই এটা শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে আমরা মনে হয় সফল হবো।

এ সময় সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. এহসানুল হক, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সি মো. মশিউর রহমান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-২ এর বিচারক জেলা জজ মো. শহিদুল ইসলাম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ পারভেজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. সুলতান মাহমুদ, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোবারক হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি জেলা জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করেন।

এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির আয়োজনে আইন পেশায় ৫০ এমন চারজন আইনজীবীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী আমান উল্লাহ আকাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইনজীবী নওয়াব আলী, আইনজীবী আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, আইনজীবী এইচ আর জাহিদ আনোয়ার ও আইনজীবী খলিলুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।