জামালপুরে মির্জা আজম এমপি বললেন, বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল খুনি জিয়া ও মোস্তাকরা

জামালপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মির্জা আজম এমপি। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এমপি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান জন্য বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। শুধু কারাগারেই থাকেন নাই। বারবার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি জীবন বাজি রেখে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে ধ্বংস করার জন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল খুনি জিয়া ও মোস্তাকরা।

১০ এপ্রিল দুপুরে জামালপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের মোট ২৫ জন গুণী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। শিল্পকলা একাডেমির বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়।

মির্জা আজম এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। উন্নত মধ্যম আয়ের দেশ গড়ের তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্ন আমাদের ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। এখন তিনি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। আর এজন্য সবার আগে স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে হবে।

জামালপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গুণীজন সম্মাননা সনদ নেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট মো. শামছুল হক। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

তিনি হিজাব-বোরখা পোশাককে ইঙ্গিত করে বলেন, আজকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে অনেকেই এমন পোশাক পরে এসেছে, যে পোশাকে নিজের কন্যা যদি থাকে, আমি চিনতে পারবো না যে আমার কন্যা কোনটি। এই পোশাক, এই কালচার কিন্তু বাড়ছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এইভাবে মাথা মোড়ে চোখ বের করে সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটানো যাবে না। আমরা সেই পাকিস্তান আমলে দেখেছি। আমাদের খালা ফুফুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। সেই সময়কার ছবিগুলোতে আমরা দেখি তারা স্লিপলেস ব্লাউজ পরতো এবং স্মার্ট ছিল। তখন কিন্তু পাকিস্তানে ইসলামের শাসনতন্ত্র ছিল। কিন্তু আজকে আমরা দেখছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বেরিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র, শাসনতন্ত্র কায়েম করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

জামালপুরের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে মির্জা আজম বলেন, আন্তর্জাতিকমানের জামালপুর স্টেডিয়াম হয়েছে। জামালপুর শিল্পকলা একাডেমি ভবন বাংলাদেশের একটি অনন্য স্থাপনা। সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে উজ্জীবিত করার জন্য আমরা শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পল্লী স্থাপন করেছি। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সেখানে একটি যাদুঘরও আমরা করেছি। সেখানে একটি ১০ তলা ভবন আছে। সেখানে এই জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে জায়গা করে দিচ্ছি। জামালপুরের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সবকিছুতেই ঐতিহ্য ধরে রাখার পর্যায়ে আমরা এসেছি। তরুণ যুবকরা যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ফিরে আসে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিদিন অনুষ্ঠান করতে হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে।

জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুক্তার হোসেন, পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ, গুণীজন সম্মাননা পাওয়া ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী ইমাম দুলাল, আইনজীবী মো. শামছুল হক, সৈয়দ নূরুল আলম সেলিম, স্বপন রহমান ও রোজী আক্তার শেফালী, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা কালচারাল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মির্জা আজম এমপি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের জন্য নির্বাচিত ২৫ জন গুণী সাংস্কৃতিক ব্যক্তির প্রত্যেককে উত্তরীয়, সম্মাননা সনদ, ক্রেস্ট ও আর্থিক সম্মাননার ১০ হাজার টাকা করে দেন।