সরিষাবাড়ীতে ছোটবোন হত্যা, বড় ভাইয়ের আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় প্রায় দেড় বছর বয়সী কোলের শিশুবোন প্রাপ্তি ঘোষকে হত্যা ও গুম করার দায়ে বড় ভাই ইন্দ্রজিৎ ঘোষকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দিয়েছেন আদালত। এছাড়া পৃথক ধারায় তাকে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন ২১ আগস্ট দুপুরে এ রায় দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার শিমলা গোপিনাথপুর গ্রামে দেড় বছরের কোলের শিশুকন্যা প্রাপ্তি ঘোষকে হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটে। ওই রাতে গোপিনাথপুর গ্রামের পরিতোষ ঘোষ কাজ শেষে বাসায় ফিরে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে স্ত্রী শিল্পী ঘোষ, বড় মেয়ে তন্নি ঘোষ ও ছোট মেয়ে প্রাপ্তি ঘোষ একই ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পারিবারিক কলহের জের ধরে রাত সোয়া ২টার দিকে পর নিজ ঘর থেকে পরিতোষ ঘোষের মেয়ে প্রাপ্তি ঘোষ নিখোঁজ হয়। সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ওই রাতেই পরিতোষ ঘোষের ছেলে ইন্দ্রজিত ঘোষ ও ছেলের মামা শ্বশুর আনন্দ মহন্তকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আনন্দ মহন্ত একই উপজেলার হাসড়া মাজালিয়া গ্রামের মৃত সুশীল মহন্তের ছেলে।

থানা হেফাজতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে শিশু প্রাপ্তি ঘোষকে হত্যা ও গুম করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। তারা পুলিশকে জানায়, মামা শ্বশুর আনন্দ মহন্তকে সাথে নিয়ে ইন্দ্রজিৎ ঘোষ তার ঘুমন্ত মা-বোনের ঘরে ঢুকে কৌশলে ঘুমন্ত ছোট বোন প্রাপ্তি ঘোষকে অপহরণ করে সরিষাবাড়ী বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ময়লা ও কচুরি পানাযুুক্ত পুকুরের পানিতে ফেলে হত্যা ও লাশ গুম করে। পরদিন সকালে স্বজনদের সাথে নিয়ে পুলিশ ওই পুকুর থেকে শিশু প্রাপ্তি ঘোষের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পরিতোষ ঘোষ বাদী হয়ে তার ছেলে ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ও ছেলের মামা শ্বশুর আনন্দ মহন্তকে আসামি সরিষাবাড়ী থানায় হত্যা ও গুমের মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর ২১ আগস্ট মামলাটির রায় ঘোষণা করেন জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন। মামলাটির প্রধান আসামি ইন্দ্রজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অপরাধে তাকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। এছাড়াও দণ্ডবিধির ২০১ ধারার অপরাধে তাকে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলাটির অপর আসামি আনন্দ মহন্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন নির্মল কান্তি ভদ্র এবং আসামিপক্ষ সমর্থন করেন আইনজীবী জয়ন্ত কুমার দেব।