মেলান্দহে উত্যক্তকারীর নির্যাতনের শিকার হয়ে চিরকুট লিখে দশম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

নিহত স্কুলছাত্রী আশা মনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় এক উত্যক্তকারীর নির্যাতনের শিকার হয়ে আশা মণি নামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। ১০ মার্চ রাতে নিজবাড়ির ঘরের আড়া থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আত্মহত্যার আগে তার হাতে লেখা দুটি চিরকুটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। চিরকুটে তামিম আহমেদ স্বপন খান (২৫) নামের এক উত্যক্তকারীর নাম উল্লেখ করে ওই ছেলেটিই তাকে একটি কক্ষে আটক রেখে তার সাথে খারাপ কাজ করেছে বলে চিরকুট লিখে রেখে গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে উত্যক্তকারী তামিম পলাতক রয়েছেন। তামিম মেলান্দহ উপজেলার সাধুপুর ইউনিয়নের চরবসন্ত গ্রামের মো. খোকার ছেলে। মেয়েটিকে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে তামিমকে আসামি করে ১১ মার্চ মেলান্দহ থানায় মামলা দায়ের করেছেন মেয়েটির বাবা দরিদ্র রাজমিস্ত্রি মো. আবু সাঈদ। মেয়েটির বাড়ি মেলান্দহ পৌর এলাকার শাহজাদপুর গ্রামে। সে স্থানীয় মালঞ্চ এম এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ত।

মেয়েটি তার একটি চিরকুটে লিখেছে, ‘মা, আমারে ওয়াহাব চেয়ারম্যানের ভাতিজা আজকের দিনে এক রুমে কাটাইছে। পারলে ক্ষমা করো। যদি কোনো বিচার করো ছেলেটার নাম তামিম আহমেদ শপন খান। মা-বাবা তোমরা ভালো থেকো। আমারে ভুলে যেও। আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের সম্মান শেষ হয়ে যেত। বাবা-মা আবার বলতাছি, ভালো থেকো। বাবা-মা ভালো থেকো। গুড বাই, সোনা বাবা-মা।’ আরেকটি চিঠিতে তামিম তার সাথে খারাপ কাজ করেছে বলে লিখে রেখে গেছে সে।

উত্যক্তকারী তামিম আহমেদ স্বপন খান।

মেয়েটির পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১০ মার্চ স্কুল ছুটির পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাড়িতে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমানোর কথা বলে নিজ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম থেকে না ওঠায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মা তাকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, ঘরের ভেতরে বিছানার ওপর বাঁশের আড়ার সঙ্গে সে ঝুলছে। মায়ের চিৎকারে লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে মেলান্দহ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে ১০ মার্চ রাতেই তার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় মেলান্দহ থানা পুলিশ। ১১ মার্চ জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

মেয়েটির বাবা আবু সাইদের অভিযোগ, ‘তামিম বিভিন্ন সময়ে স্কুলে যাওয়া আসার পথে তার মেয়ে আশা মনিকে উত্যক্ত করে আসছিল। শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যও চেষ্টা করত। আশা মনি ১০ মার্চ সকালে তার বান্ধবীর সাথে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে এসে ঘুমানোর কথা বলে সে আত্মহত্যা করেছে। তার হাতের লেখা চিঠি পড়ে জানতে পারলাম তামিম তাকে আটক রেখে তার সাথে খারাপ কাজ করেছে। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে। আমি তামিমকে গ্রেপ্তার ও তার ফঁসি চাই।

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে ওই মেয়েটির মরদেহ তার পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে মেয়ের চিরকুটে উল্লেখ থাকা তামিম আহামেদ স্বপন খানকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। আসামি তামিম বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

চিরকুটে উল্লেখ থাকা তামিম মেয়েটিকে একটি কক্ষে আটক রেখে তার সাথে খারাপ কাজ করেছে, এ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, মরদেহ উদ্ধার করার সময় ওই ঘর থেকে মেয়েটির নিজ হাতে লেখা দুটি চিরকুট মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিরকুটের সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হয়তো অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। তামিম গ্রেপ্তার হলে এবং মেয়েটির ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।