শেরপুরে বিয়ের ২৩ দিনের মাথায় পুরুসাঙ্গ ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় ভ্যানগাড়ী চালকের লাশ উদ্ধার

আব্দুর রাজ্জাক

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের নকলা উপজেলায় ১৫ লাখ টাকা কাবিনে দ্বিতীয় বিয়ের ২৩ দিনের মাথায় পুরুসাঙ্গ ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় আব্দুর রাজ্জাক (৫২) নামে এক ভ্যানগাড়ী চালকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৯ সেপ্টেম্বর বিকালে উপজেলার ২ নম্বর নকলা ইউপির ধনাকুশা মধ্যপাড়া গ্রাম থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী ময়নার (৫০) বসত ঘরের ধর্ণার সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় লাশটি। পরে ওই দিন রাত এগারোটায় রাজ্জাকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিহত রেজ্জাক ধনাকুশা বাঁশকান্দি গ্রামের আমির উদ্দিনের (৮৫) ছেলে। এবং দুই কন্যার জনক ছিলেন।

নিহতের ছোট মেয়ের জামাই এমদাদ ও তার মামা রেজাউল করিমের অভিযোগ, রাজ্জাকের লাশ উদ্ধারের সময় তার পুরুসাঙ্গ জুড়ে অসংখ্য ছুঁচ ফুটানোর চিহ্ন এবং ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় ছিল। এবং পুরুসাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশি তদন্ত হলে মৃত্যুর আসল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে তারা মনে করেন।

এ ঘটনায় রাত পৌনে বারোটায় নিহতের প্রথম স্ত্রী সুর্জি বেগম (৪৫) ও দ্বিতীয় স্ত্রী ময়না বেগম (৫০) পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নকলা থানা পুলিশের ওসি মুশফিকুর রহমান ১০ সেপ্টেম্বর সকালে জানান, জিডির ভিত্তিতে আব্দুর রাজ্জাকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এ ঘটনায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রীও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন সব বিষয় যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

থানায় প্রথম স্ত্রী সুর্জি বেগম লিখিত অভিযোগে বলেন, ময়না বেগম অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির একজন মহিলা। সে এর আগেও প্রতারণার মাধ্যমে একাধিকবার বিয়ে করেছে। অনুমানিক ২৮ বছর আগে আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার বিয়ে হয়। ওই সংসারে রাজিয়া আক্তার মৌসুমী (২৫) ও রাবিয়া জাহানা রুমা (২০) নামে দুই মেয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই দুই মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভ্যানগাড়ী চালক স্বামীকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দিয়ে ফুঁসলিয়ে ও প্রতারণার মাধ্যমে ঘটনার ২৩ দিন আগে রাজ্জাককে কৌশলে জোরপূর্বক ১৫ লাখ টাকা দেন মোহরে বিয়ে করে ময়না। বিয়ের পর থেকে ময়না আব্দুর রাজ্জাকের সাথে খারাপ আচরণ এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। এরই ধারাবাহিকতায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

সুর্জি বেগম জানান, এ বিয়েতে তার কোন অনুমতি নেয়া হয়নি।

রাজ্জাকের দ্বিতীয় বিয়ের কাজী ও জেলা শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা হাবিরুল (চট্টু কাজী) বলেন, প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ওই বিয়ের কয়েকদিন পর তার প্রথম স্ত্রী সুর্জি বেগম দেন মোহরের ১৫ লাখ টাকা কাট ছাট করা যায় কিনা এ বিষয়ে আলোচনা করতে তার কাছে আসেন। তিনি দেন মোহর সম্পর্কে আর কিছুই করতে পারবেননা বলে তাকে জানিয়ে দেন। ওই সময় তিনি বুঝতে পারেন রাজ্জাক দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিরুল বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী ময়না বেগমের চাওয়াতেই ১৫ লাখ টাকা কাবিন হয়েছে। ওই সময়ে ময়না তাকে জানিয়েছিলো ঢাকায় কাজ করে আব্দুর রাজ্জাককে বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সহায়তা করেছিলেন তিনি। কাবিনের টাকার পরিমাণের বিষয়ে রাজ্জাকের পূর্ণ সম্মতি ছিল। এছাড়া ওই বিয়েতে রাজ্জাকের পক্ষে দুইজন স্বাক্ষীও উপস্থিত ছিল।