৩২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহের সাথে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ, উন্নত ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সরকার ময়মনসিংহে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে।

২৪ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভায় যোগদান করেন।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, একনেক সভায় ৫ হাজার ৪৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প ব্যয়ের ৩ হাজার ৩৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। বাকী ২ হাজার ৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে।’

অনুমোদিত প্রকল্পের সাতটি নতুন প্রকল্প এবং একটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

ব্রিফিংয়ের সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ময়মনসিংহে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সাথে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ ও উন্নত যোগাযোগ স্থাপন হবে।’ যার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক কার্যক্রমসমূহ ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ব্রক্ষপুত্র নদের উপর সেতু নির্মিত হলে ময়মনসিংহ শহরের বাইপাস সড়কের যানজট কমে আসবে। এতে যাত্রী ও পণ্য চলাচল অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাকী ১ হাজার ৯০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইবিবি) অর্থায়ন করবে। সেতু নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো-ময়মনসিংহে ব্রক্ষপুত্র নদের উপর একটি ব্রীজ, ওভারপাস ও ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনে নির্মাণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের আওতাধীন উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং এসইজেডের সাথে রাজধানী ঢাকার উন্নত যোগাযোগ স্থাপন করা। প্রকল্পের আওতায় ৩২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মূল সেতু, ৭৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সংযোগ সেতু, ৫৫১ মিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক ওভারপাস, ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে রেলওয়ে ওভারপাস ও ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ বলেন, কেওয়াটখালি সেতু হবে দেশের প্রথম স্টীল আর্ক সেতু। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে ধরনের স্টীলের সেতু রয়েছে, এটিও সেরকম হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশের বন্যা প্রবণ এলাকায় অধিক সংখ্যক কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্যা প্রবন এলকায় কালভার্ট নির্মিত হলে পানি যত্রতত্র যেমন ঢুকবে না তেমনি পানি বের হওয়ার অনেক উৎস থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী মানসম্মত কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বৈশ্বিক নিয়মকানুন বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া, তিনি বায়ো-গ্যাস প্লান্ট পরিচালনায় আরও আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেন।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো- আরবান রেজিলেন্স প্রজেক্ট, ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন পার্ট প্রকল্প। মাদারগঞ্জ-কয়রা-মনসুরনগর (কাজীপুর)-আব্দুল্লাহ মোড় (সরিষাবাড়ী)-ধনবাড়ী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প।

এছাড়া, কেন্দ্রিয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প, ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প, দিনাজপুর জেলার ঢেপা, পুনর্ভবা ও টাঙ্গন নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এবং বিদ্যমান গ্রিড উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতাবর্ধন প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।সূত্র:বাসস।