জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন এমটি আবু কাউছার বিদ্যুৎ

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আবু কাউছার বিদ্যুৎ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

শফিউল আলম লাভলু, নকলা প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে জরুরিসেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। সংক্রমণের বিরুদ্ধে তাদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাও। এমন একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু কাউছার বিদ্যুৎ।

তিনি শরপুরের নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। করোনা সংকটের শুরু থেকেই পরিবারের কথা না ভেবে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে ছুটে যাচ্ছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। আবার করোনা পজিটিভ আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে হাসপাতালে আসা উপসর্গের রোগীদের নমুনা সংগ্রহের পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানোর দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করছেন উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রকল্পের (যক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগে কর্মরত) এমটি ল্যাবের শিরিন আক্তার।

হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (এমটি) আবু কাউছার বিদ্যুতের পরিবারের সদস্যরা নিজেরা করোনা আতঙ্কে থাকলেও নমুনা সংগ্রহের এ দায়িত্ব পালনে সম্মতি দেন। আর এতে নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন এই টেকনোজিস্ট। পরিবারের লোকজনও এ মানব সেবায় তাকে উৎসাহ প্রদান করেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩০ শয্যা থেকে উন্নতি হয়ে ৫০ শয্যায়। মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট (এমটি) পদের সংখ্যা ৩ জন। এর মধ্যে আছে আবু কাউছার বিদ্যুৎ ও মুঞ্জুরুল ইসলাম। এর মধ্যে মুঞ্জুরুল ইসলাম গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেপুটেশনে চলে গেছেন।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আবু কাউছার বিদ্যুৎ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

আবু কাউছার বিদ্যুৎ বলেন, ‘আমি এই রকম মহৎ কাজে জড়িত হয়ে মানুষের সেবা দিয়ে যেতে পারছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। সতর্কতা অবলম্বন করে আমি নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি চাকরির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে। এই কারণে যতœ সহকারে উপসর্গের রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করি। এজন্য বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশী প্রথম দিকে কেউই কাছে আসতে চাইতো না। তাদের ধারণা আমরা যেন করোনাভাইরাস নিয়ে বসে আছি; তখন কষ্ট পাই। তবে এখন আর সেই ধারণা নেই। মানুষ এখন সচেতন হওয়া শুরু করেছে। তবে এতকিছুর পরও করোনা মোকাবিলায় মাঠে দায়িত্ব পালন করছি বলে নিজেকে গর্বিত মনে করি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এমটি) আবু কাউছার বিদ্যুৎ সার্বক্ষণিক নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালের বাহিরেও বাড়ি বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করছেন। তার পাশাপাশি ল্যাবের বিভিন্ন পরীক্ষাও তাকে করতে হচ্ছে। তবে জনবল সংকটের বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, ৮ আগস্ট পর্যন্ত উপজেলায় মোট ২ হাজার ২৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট আক্রান্ত শনাক্ত ৪২০ জন, মৃত্যু ১১, সুস্থ ২৬৯ জন, চিকিৎসাধীন ১৪০ জন, এন্টিজেন টেস্ট ৮০৫ ও এন্টিজেন পজেটিভ ২১২জন।