শেরপুরে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপরে ব্রহ্মপুত্রের পানি

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে নদটি। ফলে এ নদের তীরবর্তী এলাকার গ্রামগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। টানা ১২ দিন যাবত বন্যার পানি স্থায়ী হওয়ায় শতশত হেক্টর জমির ফসল পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। অন্যদিকে পশু খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

২৮ জুলাই দুপুরে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসএই) জিয়াসমিন খাতুন জানান, সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর চেল্লাখালি, ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে।

সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী জানান, তার ইউপির ১৭টি গ্রামই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে ভাগলগড় এবং বেপারীপাড়া গ্রাম দুটি এখন পানির নিচে।

চরমোচারিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম শিপন জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বন্যার্তরা কষ্টে থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের হাতে পৌঁছায়নি ত্রাণ সামগ্রী।

অন্যদিকে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ারদোকান ও শিমুলতলীর দুটি কজওয়েতে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শেরপুরের সাথে উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। আর এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, বন্যায় হাঁস, মুরগি ও পোল্ট্রি খামার ভেসে গেছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে যেন গরুর শরীরে রোগ ব্যাধি দেখা না দেয় সেজন্য ভ্যাটেনারি সার্জনরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছেন। পাশাপাশি পশু- পাখির খামারিদের সেবা দিতে কন্ট্রোাল রুম খোলার প্রক্রিয়া চলমান আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বন্যায় ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে। এখন তারা গরুর খাদ্য সংকট মেটাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জন চিকিৎসক অনোয়ারুর রউফ বলেন, বন্যায় পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দিতে ইতোমধ্যে ২০টি মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল ও এন্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ধারণার চেয়ে বেশি স্থায়ী হচ্ছে। যে কারণে যতই সময় যাচ্ছে শাক-সবজির ক্ষেতগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৭৫৫ হেক্টর জমির রোপা-আমন বীজতলা পানির নিচে আছে। আর ৩৩০ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওয়ালিউল হাসান বলেন, বন্যার্তদের সহায়তায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও বরাদ্দ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।