বাজেটে রেল লাইন স্থাপনসহ নানা দাবি শেরপুরবাসীর

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

গারো পাহাড় অধ্যুষিত জেলা শেরপুর। এ জেলার শিক্ষক, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকরা বলছেন বর্তমান সরকারের শাসনামলে সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে সেই তুলনায় আশাব্যঞ্জক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ জেলায়। এখানকার সস্তা শ্রম বাজার, পর্যটন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে এ শেরপুরকে সামনের কাতারে নিয়ে যেতে এবারের জাতীয় বাজেটে রেললাইন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জেলা ব্র্যান্ডিং খাতে বিশেষ বরাদ্দ চান তারা।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য এবং স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেরপুরকে ৬১তম জেলা ঘোষণা করেন। এরপর থেকে এখানে ব্যবসা বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। সদর উপজেলা, নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী এই ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর। এ জেলার লোকসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬১০ জন। এছাড়া সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এর উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণ ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা। ৭১’ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার যোদ্ধাদের রয়েছে অনন্য অবদান। অন্যদিকে দর্শনীয় স্থানের জন্য সারা দেশে এ জেলার রয়েছে আলাদা পরিচিতি।

জেলার প্রধান শিল্প হিসেবে চালমিলই উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় গারো পাহাড় এলাকায় দু’টি রাবার বাগান ও প্রসেসিং কারখানা গড়ে উঠেছে। সরকারি হিসাবে তিনটি ডেইরি ফার্ম, ৩৫৪টি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি লেয়ার ফার্ম এবং ২৯৮টি ব্রয়লার ফার্ম। তবে বেসরকারি হিসাবে এর পরিমাণ দশগুণ হবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে জেলায় বিপুল সংখ্যক পুকুরে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছের চাষ হচ্ছে। দমদমা কালীগঞ্জ এলাকায় পনের একর জমির উপর গড়ে ওঠা বিসিক শিল্প নগরীতে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ৫৫টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এরমধ্যে দশটি প্লটে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে এবং অন্যান্য প্লটে অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে যে দশটি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সোয়েটার কারখানা, রাইসমিল, ফিস ফিড কারখানা, সাবান, টুথপাউডার, মসলা ও মুড়ি প্রস্তুতকারী কারখানা।

একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক হারুণ অর রশীদ বলেন, জেলার প্রাকৃতিক সম্পদ চিনামাটি বিদেশে রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর পাহাড়ী অঞ্চলে পাওয়া যায় অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ পাথর, সাদা মাটি, নুড়ি ও সিলিকা বালি। পাহাড়ী অঞ্চলে যে সাদা মাটি বা চীনামাটি পাওয়া যায় তা দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে উন্নত জাতের প্লেট, থালা, বাটি জাতীয় সামগ্রী ছাড়াও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম।

১৯৯০ সালের ভূ-জরিপ মতে, জেলার পাহাড়ী এলাকায় সাদা মাটির সন্ধান মেলে। যার দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২ মিটার লেন্স আকারে ছড়ানো। মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার টন। এ মাটি দেখতে হালকা ধূসর বর্ণের, কিছুটা হালকা বাদামী- সাদা বর্ণের। এসব প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের মাধ্যমে সরকারের কাছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষক নেতা যোবায়ের আহমেদ বলেন, জেলায় শিক্ষার হার ৪৮.০৪%। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কোচ, হাজং, বানাই, হদি, গারো এবং বাঙালিসহ নানা জাতিগোষ্ঠি অধ্যুষিত এ জেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। সুগন্ধি চাল তুলশিমালার খ্যাতি শেরপুরকে নিয়ে গেছে অনন্য স্থানে। পর্যটনের আনন্দে, তুলশিমালার সুগন্ধে এ শ্লোগানকে সামনে রেখে দেশ ও বিদেশে জেলাব্র্যান্ডিং এর কাজ করছে জেলা প্রশাসন। তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে এবারের বাজেটে আকর্ষণীয় বরাদ্দ আশা করেন।

শেরপুর মডেল গালর্স ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তপন সারওয়ার এবং নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গারো পাহাড় অধ্যুষিত এ জেলা শিক্ষার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এখানে মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এখন সময়ের দাবি। তাই এবারের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে এ দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার জোর দাবি তাদের।

খাদ্যদ্রব্য ব্যবসায়ী বাপ্পী ও আব্দুল খালেক বলেন, এবারের বাজেটে আমরা শেরপুরের জন্য আলাদা বরাদ্দ চাই। যা অন্য জেলার সাথে আমাদেরকে সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সে হিসাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে তারা জেলায় রেল লাইন স্থাপনের দাবি জানান।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সমাজকর্মী হাকিম বাবুল বলেন, শেরপুরবাসী নানাভাবে বঞ্চিত। এ থেকে উত্তোরণের জন্য তিনি এবারের বাজেটে জেলায় রেল লাইন স্থাপন ও আদিবাসী কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা বরাদ্দ দাবি করেন।

শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু উন্ননের ধারাবাহিকতায় শেরপুর অনেক পিছিয়ে আছে।

এবারের বাজেটে জেলায় রেল লাইন স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে বরাদ্দ রাখার আবেদন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এতে জেলার ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে। এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য আদান প্রদান করতে পারবে।