করোনায় দেশে নতুন আক্রান্ত ৩০৯, মারা গেছেন ৯ জন

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩০৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৪ হাজার ৯৯৮ জন। গত ২৪ ঘন্টায় কেউ করোনামুক্ত হননি। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ১১২ জন।

গতকালের চেয়ে আজ আক্রান্ত ১৯৪ জন কম। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫০৩ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় দেশে আরও ৯ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪০ জনে।

২৫ এপ্রিল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক চিকিৎসক নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।

চিকিৎসক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২১টি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৭টি। আগের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ৩ হাজার ৬৮৬টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা ৩৫০টি কম। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৩ হাজার ১১৩টি।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, আগের দিন শুক্রবার ছিল বলে দুয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়নি এবং সেই রিপোর্টও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পায়নি।

চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দেশের ২৮টি করোনা পরীক্ষাগার প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, বর্তমানে দেশের ৬০ জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। নতুন আক্রান্ত হয়েছে বরিশাল বিভাগের ভোলা ও রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলা। বাকি আছে ৪টি জেলা। এগুলো হলো-রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ঝিনাইদহ এবং সাতক্ষীরা।

নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মারা যাওয়া ৯ জনের বয়স বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ৭ জনের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ জন এবং ১ জন ষাটোর্ধ্ব । এই ৯ জনের মধ্যে ঢাকা শহরের ৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ৬ জন। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জের ২ জন, টাঙ্গাইলের ১ জন, মাদারীপুরে ১ জন, ময়মনসিংহের ১ জন এবং জয়পুরহাটের ১ জন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৪০ জন এবং এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৯৫ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৭ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৯৬ হাজার ১৬৯ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭৪ হাজার ৪৯১ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬ হাজার ৪৮০ জন। মোট কোয়ারেন্টিন আছেন ৮০ হাজার ৯৭১ জন।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় কোন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়নি। বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ১৪৫টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ১৫ লাখ ১৬ হাজার ১৯০টি। মোট বিতরণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৫২ হাজার ২৩৩টি এবং মজুদ আছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫৭টি।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ২৮ হাজার ৩৯৭ জনকে এবং এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭০ জনকে মোবাইল ফোন ও ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

চিকিৎসক নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৮৫৯ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৬ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।

বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৪ এপ্রিলের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের ২৬ লাখ ২৬ হাজার ৩২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৮ জন। ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৫২৯ জন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ২৬০ জন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৫৭২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১ হাজার ৫৫৪ জন। ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৩৩ জন এবং মারা গেছেন ৫৬ জন।

বাংলাদেশে করোনার জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতাল ও আইসলেশন ইউনিটে অক্সিজেন সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকের গণমাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন ইউনিটগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। সারাদেশের সকল উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৩৯৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল বাদে ৮টি বিভাগে মোট অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১৩ হাজার ৭৪৫টি।’

করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত দুই প্রতিষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরে নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের কোনো ঘাটতি বা সঙ্কট নেই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। যদিও এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ নেই। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও ১২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ১২টি মিনি ফোল্ড অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, অনেক মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। আরও ৩ হাজার ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো দেশে এসে পৌঁছাবে। এ ছাড়া ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলি পুনরায় ভর্তি করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কাজেই যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এটা অসম্পূর্ণ ও পুরনো তথ্য।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।

চিকিৎসক নাসিমা সুলতানা ঘরে থাকার এই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বই পড়া, বাগান করা এবং শারীরিক ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। তিনি রোজার ইফতারে পানিসহ তরল খাবার বেশি করে গ্রহণেরও পরামর্শ দেন।সূত্র:বাসস।