মেলান্দহে মালয়েশিয়াফেরত ব্যক্তি স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যবেক্ষণে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জ্বর ও কাঁশির উপসর্গ নিয়ে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মালয়েশিয়া ফেরৎ এক ব্যক্তিকে তার বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

অপরদিকে জামালপুরে এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত না হলেও জেলা প্রশাসন ও জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ১০০ শয্যার একটি কোয়ারেন্টাইন ভবন প্রস্তুত রাখার জন্য চিহ্নিত করে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়া ফেরৎ ওই ব্যক্তির নাম মো. আলতাফুর রহমান (৪৫)। মেলান্দহ উপজেলার নাংলা ইউনিয়নের চিনিতোলা গ্রামের মৃত সিরাজ মণ্ডলের ছেলে তিনি। তিনি ৮ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে বিমানে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নামেন বেলা ১১টার দিকে। এ সময় তার শরীরে জ্বর ও কাঁশির উপসর্গ দেখা দেয়। ৮ মার্চ দিনই তিনি ঢাকা থেকে সরাসরি মেলান্দহের বাড়িতে যান।

আলতাফুর রহমান ৯ মার্চ সকালে জ্বর ও কাঁশির চিকিৎসা নিতে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শিহাব উদ্দিন তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন এবং বিদেশ ফেরৎ হিসেবে বাড়িতে পরিবারের কোনো সদস্যের সংস্পর্শ ছাড়াই অন্তত দুই সপ্তাহ আলাদা ঘরে থাকার পরামর্শ দেন।

মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. ফজলুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, স্বাস্থ্য সহকারী আবু হাসান মাসুদকে মালয়েশিয়া ফেরৎ আলতাফুর রহমানের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তার শরীরে সামান্য জ্বর এবং কিছুক্ষণ পরপর কাঁশি হলেও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার মতো কোনো উপসর্গ তার দেহে পাওয়া যায়নি। তারপরও তিনি যেহেতু বিদেশ ফেরৎ এবং তার শরীরে জ্বর ও কাঁশি রয়েছে, তাই তাকে আমাদের স্বাস্থ্য সহকারীর উপস্থিতিতে বাড়িতেই আলাদা একটি কক্ষে কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী তার পর্যবেক্ষণে থাকবেন। মালয়েশিয়া থেকে আসা এই ব্যক্তির সম্পর্কে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এদিকে জামালপুরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক গৌতম রায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জেলায় প্রস্তুতি সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলার মেলান্দহে মালয়েশিয়া ফেরৎ একজনকে তার বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে বাড়িতেই তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার সামান্য জ্বর ও কাঁশি রয়েছে শুনেছি। তবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা তাকে সার্বিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এ ছাড়া এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে কাউকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়নি। জেলায় এখনও কোনো ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়নি।

সিভিল সার্জন আরো জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জামালপুর জেলায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় এবং জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও সিভিল সার্জনকে সদস্যসচিব করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। ৮ মার্চ দুপুরে কমিটির প্রথম বৈঠকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ প্রকল্প এলাকায় নির্মিত একটি ছাত্রীনিবাসের ভবনে ১০০ শয্যার কোয়ারেইন্টাইন ভবন খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেই ভবনে এবং ইতিমধ্যে চালু করা জেলা সদর হাসপাতালে ৫ শয্যার ও জেলার ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে দুই শয্যার আইসোলেশন কক্ষের জন্য এবং রোগী, চিকিৎসক ও সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের লজিস্টিক সহায়তার জন্য ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরে বার্তা পাঠানো হয়েছে।