স্বপ্নদ্রষ্টা একজন মির্জা আজমের গল্প

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জাহাঙ্গীর সেলিম॥
স্বপ্ন দেখা, স্বপ্ন বুনন করা এবং স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোর জন্য পৃথিবীতে যুগে যুগে, কালে কালে কিছু কিছ মানুষের আভির্ভাব ঘটে। যার উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন বিশ্বজনিন, কেউ বা দেশভিত্তিক কেউ কেউ আবার এলাকাভিত্তিক মটি ও মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে সার্বজনিন হয়েছেন। বরণীয় স্মরণীয় করে তুলেছেন নিজেকে এবং তার জন্মভূমিকে। কেউ কেউ আবার জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে মানুষের মাঝে বিচরণ করছেন। মানুষের জন্য অকাতরে ঢেলে দিয়ে যাচ্ছেন সর্বস্ব। নিজের অন্তরগত উৎস থেকে তৈরি করে যাচ্ছেন সবার জন্য সুন্দর ও স্বপ্নময় আগামী। নির্ভরযোগ্য ও বাসোপযোগী মানুষের জন্য শান্তিময় আবাসভূমি। এমনই একজন আমাদের মির্জা আজম।

মির্জা আজম বয়সের তুলনায় মানুষের অকৃত্তিম ভালোবাসামাখা ঈর্ষণীয় খ্যাতি ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন। নানা উপধিতে যথা যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন কাজ করে। কখনো যুব কণ্ঠ, কখনো উন্নয়নের রূপকার, কখনো তারুণ্যদিপ্ত নেতৃত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বলবো স্বপ্নবাজ এক উত্তম পুরুষ। যিনি মানুষকে ভালোবেসে মানুষের ভালোবাসা সহজেই অর্জন করার সুদক্ষ এক কারিগর। যিনি নিজে জেঁগে জেঁগে স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্নের সহজ বাস্তবায়ন ঘটাতে সক্ষম এক বীর মানুষ।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হবার গৌরব অর্জন করেন মির্জা আজম। প্রথম সংসদেই তারকা খ্যাতি পান বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার চিত্র তুলে ধরার জন্য। পরপর ছয় বার সংসদ সদস্য হবার গৌরব অর্জন করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর হাতে তুলে দেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। ইতপূর্বে সাংসদ ও হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তাঁর সংসদীয় এলাকা মেলান্দহ-মাদারগঞ্জের উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটান এই দুই উপজেলায়।

প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পাবার পর তিনি হয়ে যান গোটা জেলার আশীর্বাদ। একের পর এক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেন। যার ফিরিস্তি বর্ণনা করা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের এই মেয়াদে আমরা ভেবে ছিলাম মির্জা আজম পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন। কর্মবীর এই মানুষটি যখন মন্ত্রীত্ব থেকে বঞ্চিত হলেন গোটা জামালপুরবাসী হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয় হয় অবস্থা। অথচ আমাদের মির্জা আজম আরো অধিক গতি নিয়ে সাংগঠনিক কাজে নিমগ্ন হলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিচক্ষণতার কাছে আমরা শুধু নয় অনেক প্রাজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীরা পর্যন্ত বোকা বনে যান। জননেত্রী মির্জা আজমকে নিয়ে যে অনেক বড় চিন্তা করে রেখেছিলেন তা কেউ ঘুনাক্ষরেও আঁচ করতে পারেন নি। এক বছর পরে আমরা টের পেলাম। গোটা জাতি অবাক বিস্ময়ে দেখলো মির্জা আজমকে নিয়ে শেখ হাসিনার চমক। আওয়ামী লীগের মতো বিশ্বের অন্যতম একটি প্রাচিন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মির্জা আজমের হাতে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করলেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমান জামালপুর জেলার চিত্র-বৈচিত্রসহ নানা সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আমাদের একজন মির্জা আজমের কীর্তিগাঁথা অনেক দীর্ঘ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এক জনপদ জামালপুর । ব্রহ্মপুত্র, যমুনার পরিবেষ্ঠিত জামালপুর জেলা।। হযরত শাহজামাল (রঃ) এর পূণ্যভূমি জেলা শহরের পাড়েই নোঙ্গর করেছিলো ফকির মজনু শাহ থেকে শুরু করে অনেক মহামনব। শেরে বাংলা ফজলুল হক থেকে শুরু করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পদধুলিতে ধন্য আমাদের এই নাড়িপোতা মাটির পুণ্যস্থানটি। ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে ভাষা অন্দোলন, মুক্তি সংগ্রমি থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গৌরবময় ভূমিকা রেখেছে আমাদের জামালপুর এবং তার পবিত্র মাটিতে জন্ম নেয়া কৃর্তিসন্তানরা।

বয়সের তুলনায় জামালপুর জেলার উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো কিছুই ছিলো না বলা চলে। সরু একরাস্তার যানজট যন্ত্রণাময় এক নগর হিসেবে পরিচিত এই জামালপুর জেলা শহর। জেলা সদরের সাথে উপজেলাগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা ছিলো মান্ধাত্ব আমলের। পশ্চাৎপদতার অন্ধকারে ঢাকা গলিপথগুলো স্বাধীনতা লাভের ৪৬ বছর পরও রাজপথ হয়ে উঠতে পারেনি। অন্যান্য জেলা ও উপজেলা শহরগুলো যখন নিয়নবাতির আলোয় উজ্জল উদ্ভাসিত হয়ে উঠে তখনো আমরা অনেকাংশেই ভূতুড়ে নগরীর অভিশাপ নিয়ে অনিরাপদ বসবাস করে আসছিলাম।

সামান্য বৃষ্টিতেই আমাদের প্রাণের শহর হয়ে উঠে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর মতো। একটি রাস্তা নেই যা নিয়ে এতোদিন আমরা গর্ব করতে পেরেছি। অসহনীয় যানজট আর অবৈধ বাহন যন্ত্রণা, ফুটপাত দখলের মহোৎসব। প্যানা, ফেস্টুন আর আর নানা তার দিয়ে জালের মতো ঢেকে রাখা হতো আমাদের পৌরশহরের নীলাকাশ। চন্দ্রালোক বাধাগ্রস্থ হতো।

অবশেষে আমাদের আকাশে জ্বলে উঠলো এক উজ্জল নক্ষত্র। আভির্ভূত হলো সূর্যের মতো ত্যাজোদীপ্ত এক প্রাণপুরুষের। যার নাম মির্জা আজম। যার দুরন্ত শৈশব. কৈশোর এবং যৌবনের দিন যাপন ছিলো এই অবহেলিত জনপদে। যার উত্তাল রাজনৈতিক পদচারণায় মুখর ছিলো পিচডালা পথ। প্রতিটি সংগ্রাম আর আন্দোলনে যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অনুপ্রাণিত করে তুলেছেন নেতা কর্মীদের। জনগণের প্রাণে আশার সঞ্চার করলেও তাঁর সামর্থের মধ্যে ছিলো না চাহিদা পূরণের সম্পদ। তাঁর কষ্ট হতো অহর্নিশি, প্রাণ কেঁদে উঠতো এই দুখিনি জেলার দুরাবস্থা দেখে।

প্রতিমন্ত্রী হয়ে জেলা শহরে প্রথম এসেই মাটি ছুঁয়ে শপথ নিলেন এবার ঢেলে সাজাবেন প্রাণের চেয়েও দামি জামালপুরকে। সকল আবর্জনা, অনিয়ম আর নাগরিক যন্ত্রণার চির অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন। ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিলেন। মেডিকেল কলেজ, দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পাট গবেষণা কেন্দ্র, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, একাধীক কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, আধুনিক মানের মসজিদসহ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু করলেন।

এক রাস্তার শহরের অভিশাপ মোচনের কজে হাত দিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আধুনিক ও মানসম্মত বেলটিয়া কম্পপুর বাইপাস সড়ক নির্মান করলেন। ব্রহ্মপুত্র ব্রীজ থেকে পাথালিয় পর্যন্ত অন্য একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ শুরু এবং শেষ প্রায়। হরিপুর-বেলটিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ হলো।

যানযট নিরসনে বাংলাদেশের মধ্যে তিনিই প্রথম ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়ক নির্মানের জন্য কোটি কেটি টাকা বরাদ্ধ আনলেন। তুমুল গতিতে কাজও শুরু হয়েছে। আধুনিক কারুকাজ খচিত বহুতল ভবনের বিভাগীয় শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তার বদন্যতায় সুদীর্ঘকালের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জামালপুর পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র দয়াময়ীপাড়ায় বিশাল এলাকা জুড়ে সংস্কৃতি পল্লী গড়ে তোলার কাজ চলছে। যা হবে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দর্শণীয় একস্থান। তাঁর অক্লান্ত চেষ্টায় জামালপুরবাসীর প্রাণের দাবি মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং আধুনিকমানের ভবন নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে।

মির্জা আজমের আপ্রাণ চেষ্টায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসনের জন্য গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। নির্মান হয়েছে বহুতলবিশিষ্ট ডায়াবেটিক হাসপাতাল। জেলা শহরের পাথালিয়া থেকে শুরু করে নাওভাঙ্গাচরের বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠার পরিকল্পনা করা হচ্ছে নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের। ব্রহ্মপুত্র ড্রেজিং করে নদটির হারানো প্রবাহ সৃষ্টির পাশাপাশি অতিতের ধারাস্থান যা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে সেখানে গড়ে তোলা হবে অকর্ষণীয় জলাধার।

জামালপুরেও তাঁর বদৌলতে গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম। গড়ে তোলা হবে যাদুঘর। ইতিমধ্যে জামালপুরের ব্র্যান্ডিং নকশিকাঁথার জন্য বিশাল এলাকাজুড়ে নকশিপল্লী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কাজ চলছে। জামালপুর শহরেই গড়ে উঠছে তথ্য প্রযুক্তি গ্রাম বা আইটি ভিলেজ। এই স্থাপনা হলে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।

আমাদের অহঙ্কারের পুরুষ মির্জা আজম প্রতিদিন ঘুম উঠেই চিন্তা শুরু করেন কিভাবে জামালপুরকে উন্নয়নের রোলমডেল করা যায়। জামালপুর শহরের প্রতি ইঞ্চি জাযগায় সোনা ফলনের জন্য তিনি নতুন নতুন পরিকল্পনা আর নীলনক্সা তৈরি করছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন মির্জা আজম জামালপুরের মাটি মানুষের জন্য নিজেকে এখন নিঃস্বার্থভাবে নিবেদন করেছেন। বহিরাগত কেউ জামালপুরের মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথেই টের পাবেন এই মাটির সাথে লেপ্টে আছেন একজন মির্জা আজম। যার হাতে এখানে প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর সোনা ফলানোর চাষ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে মির্জা আজম জামালপুরের উন্নয়নে দিনরাত কাজ করছেন।

আমরা বিশ্বাস করি মির্জা আজমের মতো একজন নিবেদিত প্রাণ যিনি হাজার হাজার কোটি টাকা জামালপুরকে ঢেলে সাজানোর জন্য কাজ করছেন সেই রক্ত ঘাম ঝরানো মানুষের টাকায় উন্নয়ন কাজে কোন প্রকার দুর্নীতি হতে দিবেন না। তিনি প্রতিটি সভায়, অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। জামালপুর পৌরসভার চলমান উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছ ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিবেন।

একজন মির্জা আজমের গল্প বলে শেষ করা যাবে না। যার গুনকীর্তন গাইতে গেলে সুদীর্ঘ সময় লাগবে। লিখতে গেলে হাজার পৃষ্টা ভরে যাবে। আমরা সরাসরি দেখছি। সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করছি তার বিশাল কর্মযজ্ঞ, কর্মক্ষেত্র। আমরা গোটা জামালপুরবাসী তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। তাকে আরো উচ্চ আসনে উচ্চ শিখরে আরোহনের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কায়মনো বাক্যে প্রার্থনা করছি। জয়তু মির্জা আজম।

জামালপুর জেলাবাসীর প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এখানে। জেলায় অনেক কৃর্তিমান জন্ম নিলেও নতুন প্রজন্ম তেমন কিছুই জানে না। নিজের জন্মস্থান এবং এর ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জ্ঞানীগুনি জনদেন সম্পর্কে না জানলে মাটি ও মানুষের প্রতি প্রেম জন্ম নিবে না। প্রেমানুভূতি থেকে নাড়ির টান ভীষণভাবে কাছে টানে। জামালপুর পৌরসভাধীন একটি যাদুঘর স্থাপন করা হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এসব দেখে অনুপ্রাণিত হতো। প্রবাসী ভাই-বোনরা এসে গর্ববোধ করতো। অন্যজেলা বা পর্যটকরা এসে জামালপুরের প্রতি উন্নত ধারণা নিতে পারবে।

জামালপুর শহরের রাস্তা প্রশস্ত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও স্থানে তৈরি করা হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যগাঁথা সড়ক দ্বীপ বা ভাস্কর্য। ইতিমধ্যে জামালপুরের কতিপয় খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন সড়কের নামকরণ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আলাদা বৈশিষ্ট এবং সংস্কৃতির স্পর্শ থাকলে দর্শণার্থীদের মনের মধ্যে আলাদা প্রশান্তি জন্ম নিবে।

জামালপুরবাসীর অন্যতম সমস্যা যানজট। প্রতিদিন শহরের মানুষ নাকাল হচ্ছে এই যানজটের কারণে। প্রতিটি আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, ইজি বাইক, সিএনজি, ভটভটিসহ সকল প্রকার অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দুই একদিন এ্যাকশন চলে। তারপর রহস্যজনক কারণে পৌরকর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন নিরব হয়ে যায়। কোন অদৃশ্য শক্তির আঙ্গুলি হেলনে এই নিরবতা পৌরবাসী তা জানতে চায়। আমাদের মির্জা আজম একাধিক সভায় কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন অটোসহ যানজট নিরসনে প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য। মেয়র মহোদ্বয় আপনি একজন জনবান্ধব মানুষ। দেড়শ বছরের জামালপুরকে আপনিই পারেন যানজটের মতো অসহনীয় নাগরিক যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে। পৌরবাসী আপনার পাশে আছে।

পৌরবাসীর আরেক ভোগান্তির নাম জলাবদ্ধতা। তবে এরজন্য শুধু পৌর কর্তৃপক্ষই দায়ি নন। নাগরিকদের অচেতনতাও এই যন্ত্রণার অন্যতম কারণ। তবে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত আবর্জনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে জলাব্ধতা অনেকটাই কমে আসবে।

মির্জা আজম ঈর্ষণীয় পর্যায়ে উন্নয়ন সাধন করে চলেছেন। জামালপুর পৌরসভাকে আরো অধুনিকায়ন এবং নিরাপদ করে গড়ে তুলতে হলে নগর উন্নয়নবিদ বা নগর উন্নয়নে যারা গবেষণা করেন তাদের স্মরণাপন্ন হতে হবে। এই কাজ বা অভিজ্ঞ দক্ষ মানুষগুলোর সহায়তা নিয়ে আধুনিক জামালপুর পৌরসভার জন্য মির্জা আজমকে সামনে রেখে মেয়রের নেতৃত্বে একটি লাগসই নীলনক্সা তৈরি করতে হবে। অপরিকল্পিত স্থাপনা এবং বিধিসম্মত উপায় গ্রহণ ছাড়া একটি ইটও যাতে আর মাটিতে পোতা না হয় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।

জামালপুর জেলায় প্র্রচুর কৃষি আবাদ হয়। তাই এখানে যদি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াতকরণ একটি শিল্প গড়ে তোলা যায় তাহলে তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবে। ঘাম ঝরিয়ে সোনার ফসলে উপযুক্ত মূল্য তারা পাবেন। আপনার পক্ষেই এটা সম্ভব। পাঁচ জন সংসদ সদস্য নিয়ে আপনি মহপরিকল্পনা গ্রহণ করুন।

উন্নয়নের বরপুত্র হিসেবে খ্যাত মির্জা আজম আপনার কাছে জেলাবাসীর পক্ষে আরেকটি প্রাণের দাবি জামালপুর রেল স্টেশনকে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি আন্তনগর বিজয় ট্রেনটিকে চট্টগ্রাম-জামালপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা। পাশাপাশি দুটি পৌর বাস টার্মিনাল আছে যা সময় নোংরা এবং দুর্গন্ধ অবস্থা ও অনাকর্ষণীয়। আপনি অন্যান্য উন্নয়ন ধারার সাথে এই টার্মিনাল দুটিকে যুক্ত করুন। এছাড়া সেই মুড়ির টিন মার্কা রাজিব ও মহানগরের পাশাপাশি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ও এনা, সৌখিনের মতো সরাসরি-বিরতীহীন বাস সেবা চালু করুন। তথাকথিত সিন্ডিকেট যতবড় শক্তিশালীই হোক না কেন আপনার প্রদক্ষেপের বিরুদ্ধে তারা নস্যি মাত্র। বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে বিআরটিসি বাস চালু হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মাদকের আসর বসে। ভ্রাম্যমান মাদক ব্যবসায়িরা সহজেই মাদকাসক্তদের হাতে মাদক পৌছে দিচ্ছে। মাদকের ধোঁয়ায় নীল হয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ। দৃশ্যমান সকল উন্নয়নের সাদা অবয়বে কুৎসিত দাগে কলঙ্কিত করছে মাদক ব্যবসায়ি এবং মাদকসেবীরা। এদের কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ প্রতিটি ঘর অনিরাপদ ও অশান্তিতে ভরে উঠছে। প্রচলিত ধারায় এবং সরিষার মধ্যে বসে থাকা ভুতের কারণে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। মির্জা আজমের কঠোর নির্দেশনা প্রত্যাশা করে গোটা শহরবাসী। মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশ চিনে। ইচ্ছে করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছোট বড় সকল মাদক ব্যবসায়ীদের পাকড়াও করে জেলে ঢুকাতে পারে পুলিশ। আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ ঐ কুলাঙ্গার মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের পর কোন রাজনীতিক যাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য সুপারিশ না করে। দেখবেন অল্পদিনের মধ্যে আপনার আমার সকলের প্রত্যাশার জামালপুর আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে।

মির্জা আজম আপনি শুধু এমপি নন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নন আমাদের স্বজন, সুহৃদ মানুষ। আপনাকে কাছ থেকে এখনো ছুঁয়ে দেখা যায়। আপনাকে ফোন করলে সহজেই উত্তর পাওয়া যায়। আপনার দারস্ত হয়ে ফিরে এসেছে কোন ভয়ঙ্কর শত্রুও বলতে পারবে না। আপনি কোন পরিবারের কোন গোষ্ঠী অথবা দলীয় বিবেচনায় কেন্দ্রিভূত মির্জা আজম নয়। ধীরে ধীরে আপনি মানুষের নেতা থেকে কিংবদন্তি মানুষ হয়ে উঠছেন।

আপনার স্বপ্নের জামালপুর গড়ে উঠার পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিবে দুর্নীতি। এই দুর্নীতির দানবটাকে হত্যা করতে হবে। জিরো টলারেন্সের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আপনার তদবির আর অক্লান্ত চেষ্টায় উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ আনা হাজার হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুর্নীতির ঘূনপোকা প্রবেশ করবে এটা আপনার মতো আমরাও চাই না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ আপনার নেতৃত্বে জামালপুর হয়ে উঠবে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সমৃদ্ধ এক জেলা।

মির্জা আজম আপনাকে নিয়ে উপমা দিয়ে কাল্পনিক গল্প নয় আপনি খাঁটি বাস্তবতায় নিজেই রচনা করেছেন ইতিবাচক পরিবর্তনের গল্প। যে গল্পের শেষ নেই। এই গল্পে ভিলেন সকল চরিত্রের উত্থান নয় অনিবার্য পতনই আমরা কামনা করি।

লেখক: জাহাঙ্গীর সেলিম
উন্নয়নকর্মী ও সম্পাদক বাংলারচিঠি ডটকম, উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক পল্লীর আলো।