উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে ইসলামপুরে সৌরবিদ্যুৎ

ইসলামপুরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধরের বাড়িতে লেগেছে সৌর বিদ্যুতের আলো। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

বিনামূল্যের সোলার প্যানেল পেয়ে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার অনেক দরিদ্র পরিবারের ঘর আলোকিত হয়েছে। শুধু দরিদ্র পরিবারেই নয় এলাকার মসজিদ, মন্দির, এতিমখানা, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক ও সড়কবাতিও জ্বলছে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, বিনামূল্যে সৌরবিদ্যুৎ’ এবং ‘গ্রাম হবে শহর’ এই স্লোগানকে মূলমন্ত্র করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর কাবিটা কর্মসূচির অধীনে নবায়নযোগ্য শক্তি বাস্তবায়ন কার্যক্রমে নিয়োজিত সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) সোলার বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দিয়েছে ইসলামপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইএসডিও সংস্থাটি বিগত ২০১৬-১৭, ১৭-১৮ এবং ১৮-১৯ অর্থবছরে ইসলামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, ১২টি ইউনিয়নে দুই হাজার ২০১টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছে। এতে তিন অর্থবছরে বরাদ্দ ব্যয় করা হয়েছে ছয় কোটি ৮৮ লাখ ৯১ হাজার ৮৮৩ টাকা। এর মধ্যে অফিস আদালত, বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দিরে এক হাজার ৯৯৯টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছে সংস্থাটি। এছাড়াও মসজিদে ১০০টি, মন্দিরে ২০টি এবং স্কুল, কলেজ, এতিমখানা, মাদরাসাতে ৫০টি সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে। এগুলোর মধ্যে অফিস আদালতসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১৪টি এক ২০০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এসি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। যার সাহায্যে লাইট, ফ্যান, কম্পিউটার, প্রিন্টার চালানো যায়। অপরদিকে, ১২টি ইউনিয়নের ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সবকটিই সোলার সিস্টেমের আওতায় এসেছে। এতে করে তৃণমূল জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়াও, ইসলামপুরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সড়কবাতি বসানো হয়েছে ২০২টি।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে সোলার প্যানেল বেশ কাজে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরা জানিয়েছেন। জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার উত্তর দরিয়াবাদ গ্রামের দরিদ্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্র ধর (৩৫)। বাপদাদার পেশা কাঠমিস্ত্রি হলেও শৈশবে নিউমোনিয়ায় তাকে দৃষ্টিশক্তি হারাতে হয়। তবুও জীবন সংগ্রামে তিনি থেমে নেই। স্থানীয় কাসাশিল্পের থালাবাসন তৈরির কারখানায় কপিকল ঘোরানোর দড়িটানার কাজ করেন। দিন শেষে যা পারিশ্রমিক পান তাই দিয়ে তার সংসার চলে কোনো মতে। সংসারে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রয়েছে। তার বাড়ির আশপাশে প্রতিটি ঘরেই পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও আর্থিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেননি তিনি। বছর দেড়েক আগে তার পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও। সংস্থাটির সোলার প্রকল্প থেকে বিনামূল্যে তার ঘরের চালে ৩০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সোলার প্যানেল বসানো হয়। সেই থেকে তার ঘর আলোকিত। একটি বাতি ঘরে। আরেকটি বাতি বারান্দায় জ¦লে সারারাত।

বীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্র ধর বললেন, ‘আমি তো অন্ধ মানুষ। আগে কেরাসিনের বাতি জ্বালাইতাম। সোলার বাতি পাইয়া আমার মেলা উপকার হইছে। আমার স্ত্রী সন্তানরা সোলার বাতিতে কাজ করতে পারে। ছোট মেয়েটা সোলারের বাতিতে পড়তে পারে। ঘরে-বাইরে রাইতে কোনো সমস্যা হয় না।’

সোলার প্যানেল পেয়ে স্থানীয় জীবন চন্দ্র সূত্র ধরও (৩৬) খুব খুশি। তিনি বললেন, ‘আমাদের বিদুৎ লাইন আনার সামর্থ নাই। এখন ঘরে তিনটা সোলার বাতি জ্বালাই। মেলা উপকার হইছে।’ স্থানীয় অমল চন্দ্র দাসের (৫০) স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচজনের সংসার। ইএসডিও থেকে সোলার প্যানেল পাওয়ায় তারও অনেক উপকার হয়েছে। তিনি বললেন, ‘আমার বড় মেয়ে কলেজে পড়ে। আরেক মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তারা অনেক রাত পর্যন্ত সোলার বাতির আলোতেই পড়ে। সোলার না পাইলে অনেক সমস্যা হইতো।’ সোলার প্যানেল পেয়েছে এমন আরো কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা হলে তারাও সবাই উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

ইসলামপুরে সোলার সিস্টেম বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইএসডিও’র জামালপুরের জোনাল ম্যানেজার প্রদীপ কুমার দেব বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘ইসলামপুর উপজেলা একটি নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। বিস্তীর্ণ চরের মানুষের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া এবং যেসব এলাকায় একেবারেই বিদ্যুৎ পৌঁছেনি মূলত সেসব স্থানে আমরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। গত তিনটি অর্থবছরে এই উপজেলায় সোলার বিদ্যুৎ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ সাড়া পড়েছে। বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগের ফলে মাঠপ্রশাসন, উপজেলা শহরতলী এবং গ্রামীণ জনপদের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বেকার সমস্যা দূরীকরণসহ সার্বিকভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে সহযোগিতা করে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।’