সাবেক ডিসির আপত্তিকর ভিডিও’র ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি জামালপুরে

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মুশফিকুর রহমান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

অফিস সহায়ক এক নারীর সঙ্গে জামালপুর থেকে সদ্য ওএসডি হওয়া জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মুশফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্তে নেমেছে। তদন্তের প্রথম দিনে ২৯ আগস্ট তারা জামালপুরে থেকে ওই ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তারা বিকেলে ঢাকায় ফিরে গেছেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অফিস সহায়ক এক নারীর সঙ্গে সদ্য ওএসডি হওয়া জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের আলোচিত সেই ভিডিও কেলেঙ্কারীর ঘটনার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি ২৯ আগস্ট বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। তারা প্রথমেই নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হককে সাথে নিয়ে সাবেক জেলা প্রশাসকের সেই আলোচিত খাসকামরাটি পরিদর্শন করেন। তারা প্রায় আধাঘন্টা সময় ধরে ওই খাসকামরার ভেতরের খাটের বিছানাসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের আলামত পর্যবেক্ষণ করেন। কমিটির সদস্যদের একজন মুঠোফোনে ফোনে খাসকামরাটির ভেতরের কিছু ছবিও ধারণ করেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করেন।

পরে তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দোতলায় সভাকক্ষে বসে তদন্তের অন্যান্য দিকগুলো নিয়ে তারা বেলা ১২টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত টানা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের শুরুতেই প্রায় দেড় ঘন্টা সময় ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার বহুল আলোচিত সেই অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার জবানবন্দি গ্রহণ করেন তারা। সানজিদা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরিহিত অবস্থায় তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

তদন্তের বৈঠক চলাকালে বেলা পৌনে ২টার দিকে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা সেই সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। সেখান থেকে বের হয়ে নিচতলায় জেলা প্রশাসনের ই-সেবা তথ্যকেন্দ্রের একজন নারীকর্মীর কাছে একজন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ আরো পাঁচদিনের ছুটি বর্ধিত করার আবেদন জমা দেন। এরপর নেজারত শাখার ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. আবু আব্দুল্লাহ খান ও অফিসের কয়েকজন অফিস সহায়ক সানজিদাকে রিকশায় উঠিয়ে দিলে সানজিদা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ত্যাগ করেন। এর আগে ২৬ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে তাৎক্ষণিক অজ্ঞান হওয়ার ভান করে মেঝেতে শুয়ে পড়ে তিনদিনের ছুটির আবেদন করেছিলেন।

পরে বেলা ৩টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের মাধ্যমে উপস্থিত সাংবাদিকরা তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তাব দিলে এ নিয়ে জেলা প্রশাসক তদন্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে তদন্ত কমিটির কেউ এই মুহূর্তে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন জেলা প্রশাসক। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মুশফিকুর রহমানসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে সার্কিট হাউজে চলে যান। পরে বিকেলের দিকে তদন্ত কমিটির সবাই ঢাকার উদ্দেশে সার্কিট হাউজ ত্যাগ করেন।

আপত্তিকর ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় সরকার ২৫ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা) ড. মুশফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একজন প্রতিনিধিকে সদস্য এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখার একজন উপসচিকে তদন্ত কমিটির সচিব করা হয়েছে। তবে কমিটির বাকি সদস্যদের নাম জানা যায়নি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মুশফিকুর রহমান ছাড়া কমিটির বাকি সদস্যদের নাম সাংবাদিকদের জানাতে অস্বীকৃতি জানানো হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

জেলা প্রাশসক মোহাম্মদ এনামুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির সবাই এসেছিলেন। তারা তাদের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে ২৯ আগস্ট বিকেলে ঢাকায় ফিরে গেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তারা আবারো জামালপুরে আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর ২০১৭ সালের ২৭ মে জামালপুরে যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তার অফিসের ছোট্ট একটি কক্ষকে খাসকামরা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি খাট, জাজিম, চাঁদর ও বালিশসহ বিছানা পাতা হয়। গত ২২ আগস্ট মধ্যরাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর ও তার অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার আপত্তিকর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ২৪ আগস্ট থেকে তাদের আরও একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিও কেলেঙ্কারীর মুখে গত রবিবার আহমেদ কবীরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) পদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করে তাকে জামালপুর থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।