জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নে নানামুখী সিদ্ধান্ত

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে মানসম্মত কোনোরুপ চিকিৎসেবা না পেয়ে জামালপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক জামান লেবুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে বসেছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে। এরই অংশ হিসেবে ১৫ এপ্রিল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন।

সভায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসেবার ক্ষেত্রে নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম উঠে আসে। বিশেষ করে হৃদরোগ, কিডনিরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকা, যে কোনো রোগীকে কোনোরুপ পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই ময়মনসিংহে স্থানান্তর করা, দালালদের অসহনীয় পর্যায়ের দৌরাত্ম, চিকিৎসক এবং নার্সদের রোগীবান্ধব আচরণ না থাকা, শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে অন্ত:বিভাগে ডাক্তার না থাকা, বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক রাতের বেলায় হাসপাতালে না থাকা, করোনরি কেয়ার ইউনিট-সিসিও না থাকাসহ মানসম্মত চিকিৎসা সেবা বিষয়ে কমিটির সদস্যগণ উদাহরণ সহকারে উল্লেখ করেন। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থিত হওয়া প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন।

সভা সূত্র জানায়, হাসপাতালে ১০টি অনুমোদিত জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ পদ থাকলেও সবগুলো পদই শূন্য। বিশেষ করে মেডিসিন, শিশু, গাইনী, অর্থোসার্জারি, ইএনটি, অ্যানাসথেসিয়া, কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌন, সার্জারি ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ নাই। এছাড়া তিনজন কণিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ এবং পাঁচজন চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই। অর্থাৎ মোট অনুমোদিত ৪৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৮টি পদই শূন্য। এ অবস্থায় মানসম্মত চিকিৎসা সেবাদানে শতভাগ কাজ কীভাবে করা যাবে এ নিয়েও উপস্থিত চিকিৎসা কর্মকর্তাগণ সভায় প্রশ্ন তোলেন। শূন্য পদ পূরণে সংসদ সদস্যের নিকট তারা জোর আবেদন রাখেন।

দালালদের হাত থেকে রক্ষা, সেবার মান নিশ্চিত করা এবং নানা হয়রানী হাত থেকে রক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা, অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের অপসংস্কৃতি বন্ধ করা, রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে একটি ওষুধের দোকান এবং একটি ক্যান্টিন চালু করা, প্রতি মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার আয়োজন করা, কমিটির সদস্যগণ নিয়মিত হাসপাতাল কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করা, শুক্রবারসহ প্রতিদিন একইভাবে ডাক্তার, নার্সদের দায়িত্ব পালন করাসহ নানামুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এম ওয়াকিল, সিভিল সার্জন চিকিৎসক গৌতম কুমার রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাছির উদ্দিন, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুম রেজা রহিম, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ডল, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, জামালপুর পৌরসভার কাউন্সিলর সায়মা হামজা সিমি প্রমুখ।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনাগত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সহকারী পরিচালক চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক ফেরদৌস হাসান ও চিকিৎসক শফিকুজ্জামান।

সভার শুরুতেই অকাল প্রয়াত জামালপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক জামান লেবুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার বেদেহি আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।