উন্নয়নের বাধা বাল্যবিয়ে নির্মূল করে জামালপুরকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে : প্রকৌশলী মোজাফফর হোসেন

জামালপুর জেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত ঘোষণা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

যেখানে বাল্যবিয়ে সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। খবর পেলে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বাল্যবিয়ে শুধু বন্ধই করবো না এর সাথে যুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কোনো কাজি যদি বাল্যবিয়ে নিবন্ধন করেন অথবা কোনো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান যদি একজন শিশুকে বয়স বাড়িয়ে নিবন্ধন করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যৌন হয়ারানির বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আজকের এই ঘোষণা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বাল্যবিয়ে নির্মূল করে জামালপুরকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে। ১৮ মার্চ আস্থা প্রকল্পের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর আয়োজিত জামালপুর জেলাকে বাল্যবিয়েমুক্তকরণ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত গণসমাবেশে এসব কথা বলেন জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন।

ঐতিহাসিক এই ঘোষণাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সকালে জামালপুর শহরের তমালতলা হতে বের হয় বর্ণাঢ্য এক শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। বর্ণিল সাজে সজ্জিত শোভাযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে পৌরভূমি কার্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। পরে এখানে স্থাপিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর।

জামালপুর জেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত ঘোষণা উপলক্ষে শহরে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ স্বদেশ চন্দ্র সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন, জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক মছিরননেছা, আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক বেগম রোকেয়া, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, জয়িতা কল্পনা বেগম, জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসবিহ জামান তাবা, জিলা স্কুলের ছাত্র আদনান আবিদ খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী কমিশনার নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহায়তায় ছিলেন ইউএনএফপিএ এর অপূর্ব চক্রবর্তী ও আস্থা প্রকল্পের সমন্বয়কারী সাবিনা ইয়াসমিন।

আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক প্রশাসক আহমেদ কবীর আনুষ্ঠানিকভাবে জামালপুরকে বাল্যবিয়েমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা দেন। পরে তিনি আর একটিও বাল্যবিয়ে নয় এবং বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয়ে লিখিত শপথবাক্য পাঠ করেন। সংসদ সদস্যসহ উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে শপথ করেন। সবশেষে মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

জামালপুর জেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত ঘোষণা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শপথবাক্য পাঠ করান জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি, উন্নয়ন সংঘ, ব্র্যাক, এফপিএবি, অপরাজেয় বাংলাদেশ, জাতীয় মহিলা সংস্থা, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহস্রাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের অন্যতম কারণ বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গত তিন বছর ধরে সারা জেলায় ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠে। গত দুই মাসে জামালপুর জেলায় বাল্যবিয়ের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। সবদিক বিবেচনা করে এবং বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সকল মহলকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য ১৮ মার্চ জামালপুর জেলাকে বাল্যবিয়েমুক্তকরণের ঘোষণা করা হয়।

নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির আর্থিক সহায়তায়, ইউএনএফপিএ এর কারিগরি সহযোগিতায় স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি ও আইন ও সালিস কেন্দ্র আস্থা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আস্থা প্রকল্পের মাধ্যমে জামালপুরে ২০১৮ সাল থেকে নারী প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলায় কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় উল্লেখিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।