শেরপুর সদরে ২০ বছর পর বিএনপি থেকে লড়বেন নতুন মুখ প্রিয়াংকা

সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা

সুজন সেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-১ (সদর) আসনে দীর্ঘ ২০ বছর পর নিজেদের প্রার্থী পেল স্থানীয় বিএনপি। জোটের রাজনীতির কারণে বিগত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয় দল। যে কারণে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে গত ২০ বছরে দলের কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। ওই সময়ে এ আসনের জামায়াত প্রার্থী মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের পর এই আসনে নতুন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি।

আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হয়ে লড়বেন জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা। শুধু তাইনা নির্বাচনের মাঠে প্রিয়াংকা একেবারেই নতুন মুখ। তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর মেয়ে। এই আসনে গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হয়ে মোট চারজন মনোনয়নপত্র দাখিল করে। গত ২ ডিসেম্বর সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়। শুধু টিকে যান প্রিয়াংকা। এরপরই তিনি (প্রিয়াংকা) জয়ের লক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে রেখেছেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার মিডিয়া সেল থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি প্রতিবেদনে ঋণ খেলাপী এবং অপর দুই প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ফজলুল কাদের লুটুর দলীয় মনোনয়ন না থাকায় বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারছেন না তারা।

জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, হযরত আলী বেশ কয়েক মাস যাবত একটি নাশকতার মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তিনি কারাগারে থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মাঠে সরব রয়েছে হযরত আলীর পরিবার। চলছে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত বৈঠক ও আলোচনা। জোটের রাজনীতির কারণে বিগত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয় দল। কিন্তু জয়ের মুখ দেখা যায়নি। যে কারণে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে গত ২০ বছরে নিজস্ব কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের পর এই আসনে নতুন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করলেও ঋণ খেলাপীর কারণে তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। শুধু তার মেয়ে প্রিয়াংকার মনোনয়ন বৈধ হওয়ায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, দলীয় হাইকমান্ড থেকে মনোনয়নপত্রের চুড়ান্ত চিঠি পাওয়ার আগে এই আসনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছিল। এখন দল নিজেদের প্রার্থী পেয়ে অনেকটাই চাঙ্গা। প্রিয়াংকা বিষয়ে তারা বলেন, তিনি পেশায় চিকিৎসক এবং রাজধানীর ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন জানিয়ে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা বলেন, দীর্ঘ সময় পর এই আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এটা অনেক আনন্দের ব্যাপার। সদর আসনে ধানের শীষের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি এমনটা দাবি করে প্রিয়াংকা আরো বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের একজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। উনি শ্রদ্ধাভাজন একজন মানুষ, উনার কাছে শেখার অনেক কিছু আছে। নিজেকে অনেক লাকি মনে করছি, কারণ সর্বকনিষ্ঠ একজন প্রার্থী হিসেবে উনার বিপক্ষে প্রতিযোগীতা করবো এবং আমি মনে করি রাজনীতিতে হারজিত থাকবেই। যদি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় ধানের শীষের জয় হবেই বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাজনীতিতে স্থানীয় বিএনপির নতুন মুখ ও সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী হিসেবে সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা আওয়ামী লীগ প্রার্থী হুইপ আতিউর রহমান আতিক, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী জহির রায়হান, ইসলামী আন্দেলনের প্রার্থী মতিউর রহমান, কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আফিল শেখের বিপক্ষে নির্বাচনে লড়বেন। তবে প্রিয়াংকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হুইপ আতিক বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।