মোমিনুলের সেঞ্চুরির পর টেল-এন্ডারদের দৃঢ়তায় ১ম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩১৫/৮

বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
মোমিনুল হকের সেঞ্চুরির পর টেল-এন্ডারদের দৃঢ়তায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন তিন শতাধিক রান করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ২২ নভেম্বর টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এ ৮৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৫ রান করে বাংলাদেশ। মোমিনুল ১২০ রান করেন।

অধিনায়কের খেলার শংকা নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু করতে হয় বাংলাদেশকে। কারণ ম্যাচ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নিজের খেলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অবশেষে শীতের ভোরে কুয়াশা সরে যাওয়া আলোতে টস করতে মাঠে প্রবেশ করেন সাকিব। ফলে টাইগার দলপতিকে নিয়ে সকল শংকা কেটে এক নিমিষেই। সাগরিকায় টস লড়াইয়ে জয়ও পান সাকিব। টস জিতেই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত সাকিবের।

ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন দুই বাঁ-হাতি ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে চার ইনিংসে মাত্র ৪৭ রান করা লিটন দাসের পরিবর্তে এই সিরিজে দলে জায়গা পান সৌম্য। সম্প্রতি ব্যাট হাতে দুর্দান্ত বেশ কিছু ইনিংস খেলেছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে সেঞ্চুরিও করেছিলেন সৌম্য।

কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্মটা সাগরিকার ২২ গজে নিয়ে আসতে পারেননি সৌম্য। নিজের মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে কেমার রোচের শিকার হন তিনি।

সৌম্যকে শুরুতে হারানোটা বড় ধরনের ধাক্কাই ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু সেটি আমলে নেননি আরেক ওপেনার ইমরুল ও তিন নম্বরে নামা মোমিনুল হক। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের বিপক্ষে অবলীলায় রান তুলতে থাকেন তারা। ফলে মধ্যাহ্ন-বিরতির আগেই শতরানের কোটা স্পর্শ করে বাংলাদেশ। তাই এই ব্যাটসম্যানের হাত ধরেই প্রথম সেশন শেষ করার স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের স্বপ্নতে পানি ঢেলে দেন ইমরুল নিজেই। মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ মূহুর্তে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ইমরুল। দু’বার জীবন পেয়ে ৫টি চারে ৮৭ বলে ৪৪ রান করে বারিকানের শিকার হন ইমরুল। ফলে ২ উইকেটে ১০৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এসময় ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মোমিনুল। ইমরুল-মোমিনুলের জুটি ১০৪ রান করেন।

দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকে মোমিনুলের সঙ্গী হন মোহাম্মদ মিথুন। দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন তারা। তা দেখে স্বস্তিতেই ছিলো বাংলাদেশ শিবির। কিন্তু দলীয় ১৫৩ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেগ-স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুকে অহেতুক ছক্কা মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন মিথুন। সেই বল তালুবন্দি করতে ভুল করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক শেন ডাউরিচ। ২০ রানে করে আউট হন মিথুন।

মিথুনের বিদায়ে ক্রিজে মোমিনুলের সঙ্গী হন অধিনায়ক সাকিব। অধিনায়কের সাথে জুটি বাধার কিছুক্ষণ পরই টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন মোমিনুল। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম। সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি মোমিনুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শানন গাব্রিয়েলের প্রথম শিকার হবার আগে ১২০ রান করেন তিনি। ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ১৬৭ বলের ইনিংসটি সাজান মোমিনুল।

ঐ ওভারেই শেষ ওভারে আবারো বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন গাব্রিয়েল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ডাবল-সেঞ্চুরি করা ৪ রানে থাকা মুশফিকুর রহিমকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। এখানেই নিজের পেস তোপ থামিয়ে দেননি গ্যাব্রিয়েল। পরের ওভারে উইকেট উপড়ে ফেলেন ঢাকা টেস্টের সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। মাহমুদুল্লাহর সংগ্রহ ৩ রান।

মোমিনুল-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ’র পর সাকিবকেও নিজের শিকারে জমা করেন গ্যাব্রিয়েল। ৩৪ রান করা সাকিবের উইকেট ভেঙ্গে ফেলেন গ্যাব্রিয়েল। ২২২ থেকে ২৩৫ রানে পৌছাতেই চার উইকেট হারিয়ে বেকাদায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলের বিপর্যয় সামাল দেন বাংলাদেশের লোয়ার-অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান- মেহেদি হাসান মিরাজ, অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নাইম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। মিরাজের ২২ রানের পর নাইমের অপরাজিত ২৪ ও তাইজুলের অপরাজিত ৩২ রান বাংলাদেশকে দিন শেষে তিন শতাধিক রানের স্বাদ এনে দেয়। ৮৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৫ রান করে বাংলাদেশ। ৬৯ রানে ৪ উইকেট নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গাব্রিয়েল।

স্কোর কার্ড :
ইমরুল কায়েস ক অ্যামব্রিস ব বারিকান ৪৪
সৌম্য সরকার ক ডাউরিচ ব রোচ ০
মোমিনুল হক ক ডওরিচ ব গাব্রিয়েল ১২০
মোহাম্মদ মিথুন ক ডাউরিচ ব বিশু ২০
সাকিব আল হাসান বোল্ড ব গাব্রিয়েল ৩৪
মুশফিকুর রহিম এলবিডব্লু ব গাব্রিয়েল ৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব গাব্রিয়েল ৩
মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড ব বারিকান ২২
নাইম হাসান অপরাজিত ২৪
তাইজুল ইসলাম অপরাজিত ৩২
অতিরিক্ত (বা-৩, লে বা-৫, নো-৪) ১২
মোট (৮ উইকেট, ৮৮ ওভার) ৩১৫
উইকেট পতন : ১/১ (সৌম্য), ২/১০৫ (ইমরুল), ৩/১৫৩ (মিথুন), ৪/২২২ (মোমিনুল), ৫/২২৬ (মুশফিক), ৬/২৩০ (মাহমুদুল্লাহ), ৭/২৩৫ (সাকিব), ৮/২৫৯ (মিরাজ)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
কেমার রোচ : ১৫-২-৫৫-১,
শানন গাব্রিয়েল : ১৮-২-৬৮-৪ (নো-৩),
রোস্টন চেজ : ১১-০-৪২-০,
জোমেল বারিকান : ২১-৬-৬২-২ (ও-১),
দেবেন্দ্র বিশু : ১৫-০-৬০-১,
ক্রেইগ ব্রার্থওয়েট : ৮-১-১৯-০।
সূত্র : বাসস