মাদারগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যের শিকার রূপালী। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর ॥
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে জামালপুর জেলায় শূন্যপদ পূরণে বৈষম্য এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েও চাকরির বয়স শেষ হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চাকরিপ্রত্যাশীরা। ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চাকরিবঞ্চিত ১৬ জন প্রার্থী এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। স্থানীয় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চাকরিবঞ্চিত প্রার্থী রূপালী অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা ভিত্তিক শূন্যপদ পূরণের নিমিত্তে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রায় চার বছর পর আবেদনকারীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ৮ জুলাই। লিখিত পরীক্ষায় জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলা থেকে উত্তীর্ণ হয় ৩৬৯ জন। তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় গত ১ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। এই নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয় ১০ সেপ্টেম্বর। সারা জেলায় ২২২টি শূন্যপদ থাকলেও চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে ১২৩ জন প্রার্থীকে। এতে দেখা যাচ্ছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা ভিত্তিক শূন্যপদ পূরণের আনুপাতিক হার বিবেচনা করা হয়নি। এর মধ্যে মাদারগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৮০টি শূন্যপদের বিপরীতে মাত্র ১১ জন প্রার্থীকে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মাদারগঞ্জ উপজেলার প্রার্থীদের মধ্যে ৩৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তাদের মধ্যে ২৭ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১১ জনকে। বাকি ১৬ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের চাকরিতে প্রবেশের বয়সও শেষ হয়েছে। চার বছর ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখার কারণে চাকরি প্রত্যাশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রহসনের আশ্রয় নিয়ে উপজেলা ভিত্তিক শূন্যপদ পূরণে চরম বৈষম্য করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আসা মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ুইচূড়া ইউনিয়নের ঘুঘুমারি গ্রামের মো. শামছুল হুদার মেয়ে শারমিন নাহার সীমা উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করেছেন। ২০১৪ সালের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার দিন দেখেন চূড়ান্ত নিয়োগ ফলাফলের তালিকায় তার নাম নেই। অন্যদিকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সও তার শেষ হয়ে গেছে। শারমিন নাহার সীমা বললেন, ‘২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর চার বছর পর নিয়োগ চূড়ান্ত করা হলো। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার পরও আমার চাকরি হয়নি। এরই মধ্যে আমার সরকারি চাকরির আবেদন করার বয়সও শেষ। মাদারগঞ্জ উপজেলার শূন্যপদের বিপরীতে চাকরি পাওয়ার কথা থাকলেও আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। একই অভিযোগ করলেন উপজেলার কড়ুইচুড়া ইউনিয়নের আব্দুর রকিবের মেয়ে নাসিয়ান সুলতানা। তিনিও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি পাননি। তারও চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে চাকরিবঞ্চিতরা উপজেলা ভিত্তিক শূন্যপদ পূরণের নিমিত্তে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন জানান। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চাকরিবঞ্চিত ইমরান কায়েস, শাহানাজ পারভীন, মাফরুহা আফরিন, রোজিনা পারভীন, লিমা আক্তার, লিলিমা আক্তার, সাবিনা প্রমুখ।

এদিকে জামালপুরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার নম্বর আমাদের দেওয়া হয় না। জেলায় শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেই আমরা। মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নাম তালিকা ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাই। পরে সেখান থেকেই শূন্যপদ পূরণ বিবেচনায় নিয়োগ চূড়ান্ত করে থাকে। নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় যাদের বয়স শেষ হয়ে গেছে তাদের ব্যাপারেও জেলা পর্যায়ে আমাদের করার কিছুই নেই। সবকিছুই ঢাকা থেকে হয়।