গত বছরের ১৩ নভেম্বর পিপি হিসাবে যোগদানের পর থেকে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও বিএনপিনেতা মো. আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামী লীগ দলীয় আসামিদের জামিন করে দেওয়ার চুক্তি, বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া ও না নেয়া কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগে আদালতের ৪৯ জন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। ৪ মে রবিবার সকালে ৪৯ জন এপিপি স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মো. আনিসুজ্জামান পিপি হিসাবে যোগদানের পর থেকে স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামী লীগ দলীয় আসামিদের জামিন করে দেওয়ার জন্য চুক্তি নেন। তার জুনিয়র ও বন্ধু আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করিয়ে থাকেন। আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে শুনানি চলাকালে আসামির পক্ষের আইনজীবীকে জামিনের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করার জন্য কানে কানে পরামর্শ দেন। যা উপস্থিত আইনজীবীরা প্রত্যক্ষ করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাকে রাষ্ট্রপক্ষে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য বললে তিনি নমনীয়তা প্রকাশ করেন।
তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া এবং না নেয়ার সুপারিশের অভিযোগ রয়েছে। যা পিপি পদে থেকে সম্পূর্ণ বেমানান। পিপি মো. আনিসুজ্জামান তিনি ১ মে একটি মামলা রেকর্ড করার জন্য বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাথে আপত্তিকর ভাষায় কথাবার্তা বলেন। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে যে ভাষা সম্বোধন করেছেন তাতে আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পিপি মো. আনিসুজ্জামানের আচার আচরণ, কথাবার্তা আপত্তিকর। তিনি প্রায় সময় সিনিয়র আইনজীবীদের সম্পর্কে বিরোপ ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন। এ ছাড়া এপিপিদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। এসব অভিযোগে মো. আনিসুজ্জামানকে পিপি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বিধায় তাকে এই পদ থেকে অপসারণের দাবি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১ মে একটি মামলা রেকর্ড না করায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যা দিয়ে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন পিপি মো. আনিসুজ্জামান। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আদালতের এপিপি, পিপি এবং জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ জরুরি বৈঠক করেন। মো. আনিসুজ্জামান পিপি পদে দায়িত্বের পাশাপাশি বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২ মে শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে জামালপুর আইনজীবী সমিতির ভবনে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ এপ্রিল মারধরের অভিযোগ তোলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান তুলন বাদী হয়ে থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এদিকে, আশিকুর রহমান তুলনের বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
আশিকুর রহমান তুলনের থানায় দেওয়া অভিযোগটি মামলা রুজু না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি পিপি মো. আনিসুজ্জামান ১ মে বৃহস্পতিবার রাতে বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালে ওসিকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন বিএনপি নেতা পিপি আনিসুজ্জামান। মোবাইলে ওসিকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথপোকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ২ মে দুপুরে পৌর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন বিএনপি নেতা পিপি মো. আনিসুজ্জামান।