আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস। সারাদেশের মতো জামালপুরে অনাড়ম্বরভাবে দিবসটি পালিত হয়। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন শান্তির সোপান’। এ স্লোগান বা প্রতিপাদ্যের সাথে জামালপুরের সার্বিক বৈশিষ্টের যথেষ্ট মিল আছে। সারাদেশের মধ্যে জামালপুর জেলা সত্যিকার অর্থেই একটি শান্তিপূর্ণ জনপদ হিসেবে সমধিক পরিচিত। পাশাপাশি গারো পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত জামালপুরের মাটি ও মানুষ প্রকৃত অর্থেই আতিথিয়তা প্রবণ ও বিনোদন পিয়াসী। জামালপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে কাজে লাগিয়ে এবং বিভিন্ন পর্যটন স্থানগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারলে দেশ, বিদেশের পর্যটকদের যেমন আগমন ঘটবে তেমনি জেলার অর্থনৈতিক প্রাণপ্রবাহ সঞ্চার হবে।
জেলার বকশীগঞ্জের লাউচাপড়া, পাহাড়ি পল্লী, দেওয়ানগঞ্জের ডাংধরা, বাহাদুরাবাদ ঘাট, যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের উৎস মুখ, ইসলামপুরের বিস্তৃর্ণ যমুনার চরাঞ্চল, কাঁসাশিল্প, মেলান্দহের রৌমারি বিল, সরিষাবাড়ীর সার কারখানা ও ঐতিহাসিক পিংনা মসজিদ, পুরাতন জগন্নাথগঞ্জ ঘাট, জামালপুর সদরের হযরত শাহজামাল (রহ.) মাজার, দয়াময়ী মন্দির, মাদারগঞ্জের নবনির্মিত ঝিলসহ অসংস্য স্থাপনা আছে। যা প্রচারণা এবং নানা জটিলতার কারণে এবং দৃষ্টিনন্দনের অভাবে মুখ থুবড়ে আছে।
অপরদিকে বেসরকারি উদ্যোগে জামালপুরে উন্নয়ন সংঘের চাইল্ড সিটি, লুইস ভিলেজ, মুক্তিসংগ্রাম যাদুঘর, বেম্বো গার্ডেন, সরিষাবাড়ীর স্বপ্ননীল পার্ক, যমুনা সিটি পার্কসহ ছোটখাটো আরও বেশকিছু দর্শনীয় স্থান আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পার্কগুলোকে আরও চিত্তাকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা যাবে।
ফৌজদারি মোড় সংলগ্ন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র যা এখন খালে পরিণত হয়েছে সেখানে ডিসি পার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে হাতিরঝিলের অনুরূপ আকর্ষণীয় হবে। নির্মাণাধীন জামালপুর (শেখ হাসিনা সংস্কৃতি পল্লী) সংস্কৃতি পল্লীর স্থান নির্বাচনে সমালোচনা থাকলে সেটা দ্রুত সময়ের জন্য সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার আহ্বান করছি। এখানে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি আগামী প্রজন্মের কাছে বড় ধরনের শিক্ষার উপসর্গ হতে পারে।
জামালপুরের নকশিকাঁথা ও কাঁসাশিল্পের সমৃদ্ধির জন্যে পর্যটন শিল্পের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে সড়ক সংস্কার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আধুনিকমানের হোটেল নির্মাণ, খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং উন্নতমানের যানবাহন ও পর্যটন ট্যুরের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারলে জামালপুর হয়ে উঠবে পর্যটন শিল্পের রোল মডেল।
জামালপুরে পাহাড়, নদ,নদী, চরাঞ্চল, প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, মিল্লির মতো সুস্বাদু খাবার, বুড়িমার মিষ্টি, নকশিকাঁথা, কাঁসা, কাঁচবালি, চিনামাটি, নুড়ি পাথর, নৃ-গোষ্ঠীর তৈরি পোশাক ও তাদের শিল্পকর্ম, আবহমান বাংলার নানা বৈচিত্রের শৈল্পিকতা, সংস্কৃতি চর্চাসহ ভালোলাগার মতো বিভিন্ন উপাদান, উপকরণ।
জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পর্যটন মন্ত্রণালয় জামালপুরের অমিত সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নজর দিবেন বলে আশা করছি।