ইসলামপুরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র চরে ফসলের সমাহার

নদীর চরে ফসলের সমারোহ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন
ইসলামপুর প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর চরে এখন ফসলের সমারোহ। চরাঞ্চলের মাটিতে ফলেছে নানা ফসল। চলতি মৌসুমে যমুনা নদীর উজানে মন্নিয়াচর, সাপধরী, কাশাড়ীডোবা, চরনন্দনের পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের বেনুয়ারচর, ডিগ্রীরচর, গাইবান্ধা, গোয়ালেরচর, পলবান্ধাসহ বিস্তীর্ন চরে এবার টমেটো, ভুট্টা, মাসকলাই, ধনে, সবজি, পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত মানুষের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।

বর্ষা মৌসুমে রাক্ষুসী যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র বসত ভিটা বানে ভাসিয়ে নিলেও এখানকার উৎপাদিত ফসল তাদের শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। চরের যেদিকে তাকানো যায় শুধু ফসল আর ফসল। নানা ধরনের ফসল চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। একারণে তারা মুক্তি পেয়েছে ক্ষুধা ও দারিদ্র থেকে।

যমুনার বিস্তীর্ণ চরে সরিষা, টমেটো, বাদাম, ডাল, সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, মিষ্টি আলু, ধনেসহ নানা ফসল চাষ করে চরের মানুষ সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। নদী ভাঙ্গনে শিকার ও বানভাসি এসব মানুষ অভাব-হতাশকে পেছনে ফেলে নতুন করে আবাদ করে, নতুনভাবে অবতীর্ণ হয়েছে জীবনযুদ্ধে। দারিদ্রজয়ী নদী তীরের মানুষ এ বছর শীতের ফসল চাষ করে শত ভাগ সাফল্য পেয়েছে। টমেটো ও মরিচে বাম্পার ফলনে তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। নদী পাড়ের মানুষের আশীর্বাদও যমুনা। নদী শুধু নিতে জানে না দিতেও জানে। রাক্ষুসী যমুনা যেমন প্রতি বছর ভেঙ্গে ফেলছে জনপথ, ফসলের মাঠ। সেই যমুনাই পলি জমিয়ে সেখানে সোনার ফসল ফলাতেও সমান ভূমিকা রাখছে।

জেগে ওঠা এসব চরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শেষে যমুনা আর্শীবাদ হয়ে দেখা দেয় নদী পাড়ের মানুষের জীবনে। চরের পলি পড়া জমিতে পাট, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম ও বোরোসহ অন্যান্য ফসল আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। উজানের মন্নিয়াচর থেকে বরুল, চর নন্দনেরপাড় পর্যন্ত নদী পথে বিস্তীর্ণ চর এবং ব্রহ্মপুত্র নদের বেনুয়ারচর, ডিগ্রীরচর, গাইবান্ধা, গোয়ালেরচর, পলবান্ধাসহ বিস্তর্ণ চরে এসব ফসল আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

টমেটো।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

কৃষকরা জানান, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পুঁজি পেলে এসব ফসল চাষের পরিধি আরও বাড়বে। নদী ভাঙ্গনে লোকশান পোষাতে মৌসুমের শুরুতেই আট ঘাট বেধে চরের জমিতে নিরলসভাবে শ্রম ব্যয় করেন তারা। এবার তাদের ঘামে আর শ্রমে টমেটো ও মরিচে বাম্পার ফলন হয়েছে।

ডিগ্রীরচর, বেনুয়ারচর, গাইবান্ধা চরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলালের অক্লান্তিক প্রচেষ্ঠায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফসলি জমিতেই এখন যানবাহন চলে আসে। এতেকরে উপজেলার সাথে জেলা ও বিভাগের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় এখানকার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি।

তারা আরও জানান, যমুনার ও ব্রহ্মপুত্র চর ইতিমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশেষ করে পাট, টমেটো, ভুট্টা ও মরিচের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা এখানাকার হাটে আসছেন প্রতিনিয়ত। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হাটগুলোতে ঘটছে ব্যবসায়ীদের মিলনমেলা। চরের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে স্ববলম্বী অধিকাংশ কৃষক। তাদের ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষাও গ্রহণ করছেন। সংসার থেকে দূর হয়েছে অভাব-অনটন। তেমনই এক কৃষক আইজল মিয়া- নদীতে বাড়ি ঘর হারিয়ে নিঃস্ব এই কৃষক জেগে উঠা চরে বেগুন, টমেটো চাষের সাবলম্বী হয়ে এখন ভুট্টা চাষ করছেন।

ব্রহ্মপুত্র চরের কৃষক কালু শেখ বলেন, চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে আমার মতো অনেকেই অর্থ-বিত্ত সম্পন্ন। ফলায় ধান, টমেটো, গম, পাট, ডাল, সবজি, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, তিলসহ নানা ফসল। উৎপাদিত ফসলে নিজের চাহিদা মেটানোর পর হাটে বিক্রি করি।

যমুনার চরাঞ্চলবাসী কৃষক ওয়াদুদ মিয়া জানান, মরিচের আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে মরিচের দাম ও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি এবার ভালো টাকা লাভবান হওয়া যাবে।

ইসলামপুর কৃষি কর্মকর্তা এ এল এম রেদোয়ান জানান, এবছর যমুনার ও ব্রহ্মপুত্র চরাঞ্চলের ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয়না। বর্ষা মৌসুমে চরগুলোতে পানিতে ডুবে থাকে। ডুবে যাওয়া চরে ব্যাপক হারে পলি জমে। জমিতে পলি পড়ায় ক্ষেতে সারের পরিমাণ কম লাগে এবং ফসল ভাল হয়। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।