শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করেছে তার অমর শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। মিরপুর বধ্যভূমি ও রায়েরবাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।

ভোরের আলো ফুটতেই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধগুলোতে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। পায়ে পায়ে সবার গন্তব্য বধ্যভূমি। এখানেই যে বাঙালির সেরা সন্তানদের হত্যা করে ফেলে রেখেছিল পাকিস্তান বাহিনী, চালিয়েছিল পৃথিবীর নৃশংস এক গণহত্যা।

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কণ্ঠে ছিল উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। ছিল ইতিহাস বিকৃতকারীদের রুখে দেয়ার শপথ। সাম্প্রদায়িক শক্তির ধারক-বাহকদের প্রত্যাখ্যান এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে সঠিক ইতিহাসের চর্চার দাবিও ছিল মানুষের মাঝে।

দিবসটি উপলক্ষে বৃহষ্পতিবার সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র্যা লি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তারপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার।

সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বেদীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় বিউগলে করুন সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতার মহান স্থপতির প্রতি সম্মান জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

দলীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জক, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাতীয় শ্রমিক লীগ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, হিলাল ফয়েজীর নেতৃত্বে আমরা একাত্তর, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

এদিকে, প্রথমেই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনসাধারণ, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠন এ সময় বাংলাদেশে মৌলবাদী, ধর্মান্ধ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বিকেল তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনী বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে হত্যা করে।