সরিষাবাড়ীর নিজ গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের দাফন সম্পন্ন

সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের প্রবীণ লেখক ও সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল আর নেই। তিনি গতকাল রবিবার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।

সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল গত ৪ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনায় তার মাথা ফেটে যায় এবং কোমরের হাড় ভেঙে যায়। ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুটি কিডনির জটিলতা, ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলেসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের নেতৃবৃন্দ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জানা গেছে, ১৩ নভেম্বর বিকেলে তাঁর মরদেহ ঢাকা থেকে জামালপুরে নিয়ে আসা হয়। মাগরিব নামাজের পর জামালপুর মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি বাংলারচিঠিডটকম সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিমের উপস্থাপনায় শোক প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, দি জামালপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. রেজাউল করিম রেজনু, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা, দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ জলিল, টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি ফজলে এলাহী মাকাম, আইনজীবী ইউসুফ আলী, প্রয়াত সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের ছেলে তারিক মাহদি প্রমুখ।

এর আগে জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, জামালপুর প্রেসক্লাব, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাব ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রয়াত সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পরে প্রয়াত সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত শেষে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কাশিনাথপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয়বার জানাজা নামাজ শেষে রাতেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জামালপুর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল ১৯৬৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কাশিনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রয়াত ইছাহাক আলী রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন। মায়ের নাম রওশন আরা। জামালপুর শহরের মুকুন্দবাড়ী এলাকায় নিজ বাসায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন মোস্তফা বাবুল।

সাংবাদিকতার পেশাগত জীবনে তিনি দৈনিক বাংলা, দৈনিক জনতা, দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় জামালপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাপ্তাহিক পূর্বকথার সম্পাদক ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জামালপুর জেলা সংবাদদাতা ছিলেন। সাংবাদিকতায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব পদকে ভূষিত হন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি কবি ও লেখক হিসেবেও মোস্তফা বাবুলের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তার প্রকাশিত তিনটি কাব্যগ্রন্থ ‘নিষিদ্ধ স্লোগান’, ‘চারপাশে শুধু নীল মানুষ’ ও ‘শূন্যতার অভিমুখী’ পাঠক সমাদৃত হয়। সমাজের অস্পৃশ্য নারীদের জীবন কাহিনী নিয়ে লিখেছেন ‘বেশ্যাবৃত্তির সাতকাহন’ নামে একটি বই। এছাড়াও তিনি সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ‘মতিয়র রহমান তালুকদার স্মারকগ্রন্থ’ লিখেছেন।