সেই লোকটা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি, কিন্তু…

তিনিই সেই লোক। অনেকগুলো পুরনো কাপড় পরে সেই মোটামতো ঘুরে বেড়াতেন এই শহরে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম : জামালপুর শহরের প্রধান সড়কে যারা নিয়মিত চলাচল করেন তারা একটু মনে করে দেখুন লোকটাকে মনে পড়ে কিনা। শহরের সকাল বাজার থেকে বকুলতলা মোড় পর্যন্ত একজন লোককে শীত আর গরম নেই, সব সময় অনেকগুলো পুরনো জামা-প্যান্ট পরে, বড় বুটজুতা পরে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে হয়তো অনেকেই দেখেছেন।

তাকে দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে সেভাবেই দেখা যেতো। তিনি বদ্ধ পাগল নন, কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন। তার বয়স আনুমানিক ৮০ বছর। সেই লোকটাকে অনেক দিন ধরে রাস্তায় দেখা যায় না। তাকে পাওয়া গেছে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বিছানায়।

গত ১০ জুলাই পথচারী পরিচয়ে এক ব্যক্তি সেই বৃদ্ধ লোকটাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে যান। লোকটার খুব সমস্যা হচ্ছিল। তার সম্পর্কে ফেসবুকে পোস্ট দেখে নজরে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জামালপুর ফিন্যান্সিয়াল হেল্প সেন্টারের সদস্যদের।

লোকটার পাশে দাঁড়ান জামালপুর ফিন্যান্সিয়াল হেল্প সেন্টারের সদস্যরা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর ফিন্যান্সিয়াল হেল্প সেন্টারের সভাপতি জামালপুর জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র রেদোয়ান খন্দকার মাহিন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এই লোকটার সাথে যুক্ত হয়েছি গত ১২ আগস্ট থেকে। তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমি এবং আমার সংগঠনের শিশির আলী, শান্তা আক্তার, শেখ বিপর্না আলম বন্যা ও আরবি আক্তার পালাক্রমে তার সেবা করছি। আমরা এসেই তাকে আমাদের নিজেদের টাকায় ১২টি টেস্ট করিয়েছি। যে ওষুধ সরবরাহ নেই সেগুলো আমরা বাইরে থেকে কিনে দিচ্ছি। তার পরনের কাপড় তিনটি গেঞ্জি, একটি লুঙ্গি ও একটি গামছা দিয়েছি। শরীর পরিষ্কার করে দিয়েছি। প্রতিদিন নরম খাবার দিচ্ছি। ফল বিশেষ করে প্রতিদিন কিছু কিছু করে আঙুর খাওয়াই। আমরা তাকে দাদু বলে ডাকি। লোকটা খুবই অসহায়। তার কি হবে জানি না। তিনি কি তার পরিবারের খোঁজ পাবেন।

রেদোয়ান খন্দকার মাহিন আরও বলেন, আমরা শুনতেছি তাকে নাকি হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিবে। লোকটা আগের চেয়ে সামান্য কিছুটা সুস্থ হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাকে বেশ সহযোগিতা করেছেন। তিনি হাটতে পারেন না। বসতে পারেন। তার আরও কিছুদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা গ্রহণের দরকার আছে। সারাক্ষণ হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই তার সময় কাটে। তার স্মরণশক্তিও লোপ পেয়েছে। পরিবারের কারো কথাই তিনি মনে করতে পারেন না। তবে হাসপাতালের ভর্তি খাতায় তার নাম নূরুল ইসলাম। এই নামটাই সঠিক কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার বাড়ি কুমিল্লার নাজিমনগরে, তার নাকি তিনটি মেয়ে আছে, এইটুকুই বলতে পারেন। তিনি লিখতেও পারেন না। আমরা তো আছিই। তারপরও বলছি এই অসহায় বৃদ্ধ লোকটাকে সুস্থ করে তুলতে যে কেউ তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারেন। যোগাযোগের ফোন নম্বর : ০১৭২৮০৫৭৩৭৫