নারী বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : ফিফা নারী বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা সারাই বারেমানের মতে-এবারের নারী বিশ্বকাপে একের পর এক অঘটন এটাই প্রমাণ করে যে, দলের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক ছিল।

এবারের আসরে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ২৪ থেকে বাড়িয়ে ৩২টি করা হয়, যা নিয়ে বেশ সমালোচনা মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে। কেউ কেউ একথাও বলেছে গ্রুপ পর্বে বেশীরভাগ ম্যাচই হবে একপেশে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে আয়োজিত বড় পরিসরের এই বিশ্বকাপে বেশ কিছু অঘটন ইতোমধ্যেই দেখে ফেলেছে ফুটবল বিশ্ব।

ব্রাজিলকে পিছনে ফেলে জ্যামাইকা গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরিয়েছে। মরক্কো ও কলম্বিয়াকে নক আউট পর্বে জায়গা করে দিতে জার্মানী ও দক্ষিণ কোরিয়া বিদায় নিয়েছে। নাইজেরিয়া গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে অঘটন ঘটিয়েছে। নারী বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেয়েছে মরক্কো, জ্যামাইকা ও ফিলিপাইন।

ইএসপিএনকে বারেমান বলেছেন দলের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যে শতভাগ সঠিক ছিল তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত, ‘বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা ৩২’এ উন্নীত করাটা ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত একটি সিদ্ধান্ত। এতে শুধুমাত্র মূল পর্বে অংশ নেয়া দলগুলোই প্রভাবিত হয়নি। বরং বাছাইপর্বে খেলা দলগুলোই উপকৃত হয়েছে। ক্রমাগত উন্নতির পথে থাকা নতুন দলকে আমার খুঁজে পেয়েছি। গ্রুপ পর্বের ফলাফলই সব বলে দিচ্ছে। সত্যিকার অর্থেই আমি দলগুলোকে নিয়ে দারুন খুশী।’

বারেমান আরো বলেছেন ঐতিহ্যগত সুপারপাওয়ার ও উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে পার্থক্য ক্রমেই কমে আসছে বলে তার বিশ্বাস, ‘আমার কাছে মনে হয় আমরা এবারের বিশ্বকাপে দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য কমে আসার প্রক্রিয়া দেখেছি। এটা আমাকে সত্যিই সন্তুষ্ট করেছে। ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা আটটি দলের সাতটিই ছিল ইউরোপের। সেখানে ইউরোপীয়ান আধিপত্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। কিন্তু এবার ইউরোপীয়ানবেশ কিছু বড় দল গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। এতে অন্য অঞ্চলের নারী ফুটবলের উন্নতি প্রমানিত হয়।’

যদিও বেশ কিছু অঞ্চলে এখনো নিজ নিজ দেশের ফেডারেশনের সাথে জাতীয় দলের বিরোধ চলমান রয়েছে। জ্যামাইকা দল বিশ্বকাপের আগে জেএফএফ নিয়ে সমালোচনায় মুখর ছিল। এই একই সমস্যা দেখা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও জাম্বিয়ার মধ্যেও। গ্রুপ পর্বের মাঝামাঝিতে কানাডিয়ান ফেডারেশনকেও কিছু সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর ইতালিও তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছে।

বারেমান বলেছেন তিনি বিশ্বাস করেন মাঠের বাইরের এসব ইস্যু সবসময় সামনে না নিয়ে এসে খেলোয়াড়দের নিজ নিজ পারফরমেন্সের উপর আরো মনোযোগী হওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের সময় খেলোয়াড়দের মাঠে মনোনিবেশ করাটা জরুরী। অবশ্যই এসব ইস্যু সমাধানাও জরুরী। আগের বিশ্বকাপগুলোতেও আমরা এসব দেখেছি। অন্য ক্রীড়া ও অন্য টুর্নামেন্টেও আমরা এসব সমস্যা দেখেছি। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে সদস্য দেশগুলোকে ফিফা যথেষ্ট সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। সবাই জানে বিশ্বকাপে অনেক দলই অত্যন্ত উঁচুমানের পেশাদারীত্ব প্রদর্শন করে থাকে।’

বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে অণুশীলন ও প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ বাবদ গত বছর অক্টোবরে ফিফা প্রতিটি নারী দলকে ৯ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করেছে। বিশ্বকাপের পর প্রতিটি দেশকে সমুদয় অর্থ ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব ফিফার কাছে জমা দিতে হবে। বারেমান বলেন, ‘বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী দলগুলোকে ফিফা যে সহযোগিতা করছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দল যাতে সম্ভাব্য সেরা পন্থায় প্রস্তুতি নিতে পারে আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চাই। সে কারনেই তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। সেসব অর্থ কিভাবে ব্যয় হয়েছে সেটা দেখতে পেয়ে আমি দারুন খুশী। বিভিন্ন ম্যাচের ফলাফলই প্রমান করছে প্রস্তুতি কেমন হয়েছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত শেষ ষোলতে খেলছে জ্যামাইকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো। পুরুষ ও নারী দলের মধ্যে প্রথম ওশেনিয়ান দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ম্যাচ জয় করেছে। ফিলিপাইন, জাম্বিয়া, পর্তুগাল নারী বিশ্বকাপে প্রথম জয় নিশ্চিত করেছে। আমি মনে করি এসবই অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা, ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’