শেরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আ.লীগ নেতা খুন : এলাকায় উত্তেজনা

গ্রামের বাড়িতে আব্দুল খালেকের লাশ পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনসহ স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকীর অনুসারিদের হামলায় গুরুতর আহত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক (৫২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ১৭ জুলাই সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে থাকাবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। খালেক জেলা চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও কামারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি দুই সন্তানের জনক। এখবর এলাকায় পৌঁছালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ভীমগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করে।

খালেক ওই এলাকার মৃত ফরহাদ আলীর ছেলে।

জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত ২ জুলাই বিকেলে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর চকপাড়া এলাকার রাস্তায় খালেককে একা পেয়ে ঘেরাও করে এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকীর (৪৫) নেতৃত্বে তার অনুসারীরা। এসময় দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, পিটিয়ে রক্তাক্তসহ হাত-পা ও মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলে খালেকের। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে অস্ত্রধারীরা দুই রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে সটকে পড়ে। এ সময় স্থানীয়রা খালেককে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

তার অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন রাতেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। তার পর থেকেই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন খালেক। ওই ঘটনায় খালেকের স্ত্রী আসমাউল হোসনা বাদী হয়ে নূরে আলম সিদ্দিকীকে প্রধান আসামি করে তার সহযোগীসহ ২২ জনকে স্ব-নামে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ ফারুক আহম্মেদ (২৬) ও সোহেল রানা (৩৭) নামে এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও কদিন পরই তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকেই প্রধান আসামিসহ অন্য সকল আসামি পলাতক রয়েছে।

এদিকে ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ থেকে গ্রামের বাড়িতে আব্দুল খালেকের লাশ পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনসহ স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে, শুরু হয় শোকের মাতম।

স্থানীয় সমাজসেবক ফজলুল হক মাস্টার, সাইদুর রহমান ও স্বপন মিয়াসহ অনেকেই জানান, নূরে আলমের সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্র-ছায়ায় থাকার অভিযোগ তুলে তারা বলেন, তার বিরুদ্ধে অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজী, হামলা-মারপিটসহ প্রায় ২০টি এবং ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১১টি দুর্নীতির মামলা এখনও চলমান রয়েছে।

অন্যদিকে আব্দুল খালেক ছিলেন এলাকার সমাজসেবক এবং নূরে আলম বাহিনীর নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদী। তিনি দুই বছর আগে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সমাজসেবার পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় হয়ে পড়েন এবং কিছুদিন আগে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়েই খালেকের প্রতি আক্রোশবশত: তাকে হত্যা করা হয়েছে।

খালেকের স্ত্রী আসমাউল হোসনা বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নূরে আলম ও তার বাহিনীর লোকজনের টার্গেটে ছিলেন তার স্বামী। তিনি প্রধান আসামি নূরে আলমসহ পলাতক সকল আসামিকে গ্রেপ্তারসহ স্বামী হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

সদর থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল জানান, এর আগে হামলার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে আদার সেকশনে মামলা হয়েছে। এখন এটা হত্যা মামলায় রুপ নিবে। প্রধান আসামি নূরে আলমসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।