শীর্ষ তিনে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করার সুযোগ ক্রোয়েশিয়া-মরক্কোর

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ সেমিফাইনালে পরাজিত দুই দল ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো কাতার বিশ্বকাপে ১৭ ডিসেম্বর খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে একে অন্যের মোকাবেলা করবে। বিশ্বকাপের আসরে শীর্ষ তিনে থেকে দেশে ফেরার সুযোগ কোন দলই হাতছাড়া করতে চাইবে না। আর সে কারণেই গতবারের রানার্স-আপ ও এবারের বিশ্বকাপে একাধিক অঘটনের জন্ম দেওয়া উজ্জীবিত মরক্কোর মধ্যে একটি জমাট লড়াইয়ের আশা করছে পুরো ফুটবল বিশ্ব।

জ্লাটকো ডালিচের দল সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে ফাইনালের টিকিট পায়নি। অন্যদিকে এ্যাটলাস লায়ন্সরা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সাথে আরেক সেমিতে দুর্দান্ত লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ২-০ গেলে পরাজিত হয়ে স্বপ্নের ফাইনালে যেতে পারেনি।

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমান করা ক্রোয়েশিয়ার জোসকো গাভাডিওল আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসিকে আটকাতে পারেননি। যদিও আসরে আরবি লিপজিগের এই তরুণ পারফরমেন্স ইতোমধ্যেই ইউরোপে তাকে অন্যতম চাহিাদ সম্পন্ন ডিফেন্ডারে পরিনত করেছে। আগামী মৌসুমে যেকোন শীর্ষ দলই তাকে দলে পেতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। সেমিফাইনালে মেসির পেনাল্টি থেকে প্রথম এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এরপর জুলিয়ান আরভারেজের একক প্রচেষ্টায় যে গোলটি হয়েছে তা বিশ^কাপের অন্যতম সেরা গোলের তকমা পেয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলটিও এসেছে আলভারেজের কাছ থেকে, ডানদিক থেকে তকে দুর্দান্তভাবে বল যোগান দিয়েছেন মেসি। আর এতেই টানা দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে যাবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ক্রোয়েটদের।

২০১৮ ফাইনাল ও ২০২২ সেমিফাইনালের পথে ডালিচের দল নক আউট পর্বে নির্ধারিত সময়ে জিততে পারেনি। জেতার জন্য তাদের হয় অতিরিক্ত সময়ে কিংবা টাই ব্রেকারের সহায়তা নিতে হয়েছে। এর আগে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে নেদারল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া।

অতিরিক্ত সময়ে ও টাই ব্রেকারে একের পর এক ম্যাচে নিজেদের প্রমান করা ক্রোয়েশিয়া একটি বিষয়ে অবশ্য স্বস্তি পাচ্ছেনা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তৃতীয় স্থান নির্ধারনী কোন ম্যাচ স্পট কিকে গড়ায়নি। সমর্থকদের দ্বারা দারুণভাবে উজ্জীবিত মরক্কো হয়েতো চাইবে না ম্যাচটি টাই ব্রেকার পর্যন্ত যাক। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে ইতোমধ্যেই ইতিহাস রচনা করেছে মরক্কো। তাছাড়া স্পেন, বেলজিয়াম, পর্তুগালের মত বড় দলগুলোকে বিদায় করে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা মরক্কো তাদের শেষ সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইবে না।

ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের দল বুধবারের সেমিফাইনালে ফ্রান্সকেও ছেড়ে কথা বলেনি। কিন্তু থিও হার্নান্দেজের গোলের পরে সুপার সাব রানডাল কোলো মুয়ানি মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে গোল দিয়ে মরক্কোর বিশ্বকাপ স্বপ্ন যাত্রা শেষ করে দিয়েছে। ইনজুরিতে পড়ে নুসাইর মাজরাওয়ি, অধিনায়ক রোমেইন সেইস ও নায়েফ আগুয়ের্ড একটু আগে ভাগে মাঠত্যাগ করায় মরক্কোর ভাগ্য সহায় হয়নি। তবে মরক্কোর এই দলটি যখন দেশে ফিরবে তখন নি:সন্দেহে তাদেরকে নায়কোচিত সংবর্ধনা দেয়া হবে। আর এমনো হতে পারে তখন তাদের গলায় থাকবে তৃতীয় স্থানের ব্রোঞ্জ পদকটি।

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হার্নান্দেজের দেয়া প্রথম গোলটি আগে রেগ্রাগুইয়ের দল আগের ছয় ম্যাচে কোন গোল হজম করেনি। বুধবারের ম্যাচে মাত্র পাঁচ মিনিটেই তারা গোল হজম করেছিল। তবে ২০১০ সালে স্পেনের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ^কাপের এক আসরে টানা পাঁচ ম্যাচে গোল হজম না করার রেকর্ড তারা গড়েছে।

এর আগে গ্রুপ-এফ’এ প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। গোলশুন্য ড্রয়ে দিয়ে ম্যাচটি শেষ করে তারা আসর শুরু করে। রেগ্রাগুইয়েল শক্তিশালী ব্যাকলাইনের বিপরীতে ক্রোয়েটরা মাত্র পাঁচবার টার্গেটে শট নিতে পেরেছিল। একই ধরনের প্রতিরোধ যদি মরক্কো কালকেও ম্যাচেও ধরে রাখতে পারে তবে স্থান নির্ধারনী ম্যাচে তাদের জয় সুনিশ্চিত।

আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে পরাজিত সেমিফাইনালের ম্যাচটিতে ক্রোয়েশিয়া শিবিরেও ইনজুরি পিছু ছাড়েনি। ৫০ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে মার্সেলো ব্রোজোভিচকে উঠিয়ে নেয়া হয়। তিনি মোটেই স্বস্তিবোধ করছিলেন না। কালকের ম্যাচে তার খেলা নিয়ে বেশ শঙ্কা রয়েছে। ২০ বছর বয়সী সেন্টার-ব্যাক গাভাডিওলকে পায়ের ব্যাথার কারনে ইনজেকশন পর্যন্ত নিতে হয়েছে। ডালিচ ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে শতভাগ ফিট না থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে তিনি কোন ধরনের ঝুঁকি নিবেন না। ব্রোজোভিচের স্থানে মধ্যমাঠে লোভরো মায়ের ও ক্রিস্টিয়ান জাকিচ প্রস্তুত রয়েছেন। তবে আরেক হাই রেটেড সেন্টার-ব্যাক জোসিপ সুটালোও গাভাডিওলের স্থানে খেলতে পারেন। অভিজ্ঞ ইভান পেরিসিচ তার জায়গা ধরে রেখেছেন। বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষস্থান লাভের আশা এখনো তিনি করে যাচ্ছেন।

এদিকে আগুয়ের্ড, মাজারাওয়ি ও সেইস প্রত্যেকেই ইনজুরি কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠায় রেগ্রাগুই দু:শ্চিন্তা মুক্ত হয়েছেন।