মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নাকুগাঁও বন্দরে স্থবিরতা, বিএনপিপন্থী শ্রমিকনেতাদের দুষছেন আমদানিকারকরা

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থল বন্দরের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ফলে এ সীমান্ত পথে সকল প্রকার আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, প্রতি বর্গফুট পাথর ভাঙ্গা এবং মালামাল লোড-আনলোডের জন্য এক টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি করা হলেও মালিকপক্ষ তা মানতে নারাজ। এ কারণে তারা এমন কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল মনে করছেন বিএনপিপন্থী শ্রমিকনেতাদের ইন্ধনে এ অচলাবস্থার মূল কারণ।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে জেলার নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থল বন্দরে এখন বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। নেই পাথর ভাঙ্গা শ্রমিকদের হৈ-চৈ। স্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে মেশিনপত্র। পাথর ভর্তি ট্রাকের লোড-আনলোডের হাকডাক ও পাথর ব্যবসায়ীদের ছুেটাছুটি না থাকায় অনেকটা পরিত্যক্ত খোলা মাঠের মতো পড়ে আছে পুরো বন্দর এলাকা। ফলে ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা দেশের মধ্য উত্তরের এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থল বন্দরটি এখন স্তব্ধ হয়ে আছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারতের মেঘালয়, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কিছু অংশসহ নেপাল ও ভুটানের বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে।

ধর্মঘটকারী সাধারণ শ্রমিকরা জানায়, বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে পাথর ভাঙ্গা এবং ভারতীয় ট্রাকের পাথর লোড-আনলোডের কাজে প্রতি বর্গফুট হিসেবে তিন টাকা করে দিয়ে আসছে আমদানিকারকরা। মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে শ্রমিক এবং আমদানিকারক কর্র্র্তৃপক্ষের মধ্যে এ পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোন লাভ হয়নি। এ কারণে গেল ১ সেপ্টেম্বর থেকে মানববন্ধন কর্মসূচীর পর অর্নিদিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

বন্ধর শ্রমিক শাহজামাল বলেন, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকরা দিশেহারা। এছাড়া অনেক শ্রমিক তাদের পাথর ভাঙ্গার কাজ করতে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হলেও মালিকরা তার চিকিৎসার দায়ভার নেয় না।

আরেক শ্রমিক মুন্তাজ আলী বলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে আমদানিকারকদের সাথে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এখন পর্যন্ত দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন অব্যাহত আছে। এ কারণে নানাভাবে হুমকি-ধামকির শিকারও হতে হচ্ছে তাদের।

আশরাফ মিয়া নামে এক শ্রমিক জানায়, মাঝে-মধ্যে মেঘালয় রাজ্যের রফতানিকারকদের নানা সমস্যার কারণে মাল এ বন্দর দিয়ে আসা বন্ধ থাকে। তখন তারা এমনিতেই বেকার হয়ে পড়ে। ওই অবস্থায় তাদের কেউ দেখেনা। অথচ এখন আমদানিকারকরা এক টাকা মজুরি বাড়াতে নারাজ।

অন্যদিকে দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবেনা বলে জানিয়েছেন নাকুগাঁও স্থল বন্দর লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আলম মিয়া।

এদিকে নালিতাবাড়ী নাকুগাঁও স্থল বন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, শ্রমিকরা এতোদিন খাচায় করে পাথর ট্রাকে লোড করতো। আর এখন পেলোডোর মেশিনের মাধ্যমে পাথর লোড করায় শ্রমিকদের পরিশ্রম অনেক কম হয়। সে হিসেবে তাদের মজুরি কমানো উচিত। কিন্তু আমরা না কমিয়ে তাদের আশ্বাস দিয়েছি মার্কিন ডলার স্থিতিশীল হলে পরবর্তীতে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টা দেখা হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল মনে করেন বিএনপিপন্থী শ্রমিক নেতাদের ইন্ধনে বন্দরে আজ এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।