রশিদপুরে পুত্রের নির্যাতনে পিতার মৃত্যু, হামলা, ফাঁকা গুলি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর এলাকায় মাদকাসক্ত ছেলের শারীরিক নির্যাতনে বাবার মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আব্দুর রশিদ (৭০)। তাকে নির্যাতনকারী মাদকাসক্ত ছেলে রিপনকে (২২) আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার এবং রিপনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় রিপনকে ছিনিয়ে নিতে স্থানীয় কতিপয় লোক পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এর জবাবে পুলিশ সেখানে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। হামলার সময় সদর থানার এএসআই রাজিবসহ ৪/৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। ২১ মে এসব ঘটনা ঘটে। আব্দুর রশিদকে হত্যার ঘটনায় এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর এলাকার বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতেই থাকতেন। তার তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে রিপন মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার জন্য প্রায় তিনি তার বাবাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। সর্বশেষ গত ২০ মে রিপন তার বাবাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। ছেলের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে কয়েকজন লোক নিয়ে আব্দুর রশিদ ২০ মে সন্ধ্যায় সদর থানায় যান রিপনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করতে। এ সময় এলাকার কতিপয় লোক ছেলে-বাবার ঝগড়ার ঘটনাটি ২১ মে সালিস করে মীমাংসা করার কথা বলে আব্দুর রশিদকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। পুলিশ আব্দুর রশিদের লিখিত অভিযোগটি থানায় সংরক্ষণ করে রাখে।

এদিকে থানায় জিডি করতে যাওয়ায় মাদকাসক্ত রিপন ক্ষীপ্ত হয়ে ২১ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার বাবা আব্দুর রশিদকে শারীরিক নির্যাতন করলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। খবর পেয়ে তার মেজো ছেলে জাহাঙ্গীর আলম শিপন ও পরিবারের অন্যান্য স্বজনরা গুরুতর অসুস্থ আব্দুর রশিদকে জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তারা লাশ বাড়িতে নিয়ে এলাকায় কতিপয় অসাধু লোকজনের চাপে তড়িঘড়ি লাশ দাফনের উদ্যোগ নেন।

খবর পেয়ে ২১ মে বিকেলে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন সুমন ও সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল রশিদপুরে আব্দুর রশিদের বাড়িতে গিয়ে আব্দুর রশিদের লাশ উদ্ধার এবং তার ছেলে রিপনকে আটক করে ফিরছিলেন। এ সময় রিপনকে ছিনিয়ে নিতে কতিপয় লোকজন পুলিশের ওপর হামলা করে। হামলায় সদর থানার এএসআই রাজিবসহ ৪/৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। একপর্যায়ে পুলিশ সেখানে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে থানায় চলে যায়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সেখানে তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে মৃত আব্দুর রশিদ আগের দিন লোকজন নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে আসার কথা স্বীকার করে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন সুমন বলেন, ছেলের নির্যাতনের অভিযোগ করতে লোকজন নিয়ে আব্দুর রশিদ আগের দিন ২০ মে সন্ধ্যায় থানায় এসেছিলেন। তখন এলাকার লোকজন বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ২১ মে সালিস বসবে বলে জানান। সালিসে সুরাহা না হলে থানায় এসে জিডি করবেন বলে চলে যান। আব্দুর রশিদের অভিযোগটি থানায় রয়েছে। আব্দুর রশিদের লাশ নিয়ে আসার সময় আটক রিপনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয় বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আব্দুর রশিদকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ পেয়ে ২১ মে দুপুরে পুলিশ ফোর্স নিয়ে রশিদপুরে মৃত আব্দুর রশিদের বাড়িতে যাই। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মর্গে পাঠানোর জন্য আব্দুর রশিদের লাশ উদ্ধার এবং তার ছেলে রিপনকে আটক করে থানার দিকে রওনা হই। এ সময় স্থানীয় লোকজন রিপনকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা করে। তখন কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সক্ষম হই। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় ফয়সাল (২৩) নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তিনি একই গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে।

তিনি আরো জানান, আব্দুর রশিদকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে তার ছোট ছেলে আটক রিপনকে আসামি করে রিপনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম শিপন বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করবেন। অপরদিকে পুলিশের গাড়ির বহরে হামলার অভিযোগে আটক ফয়সালসহ অজ্ঞাত আরো কিছু লোকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হবে। ২১ মে রাতেই মামলা দুটি দায়ের হবে। আব্দুর রশিদের লাশ থানা হেফাজতে রয়েছে। ২২ মে সকালে নিহত আব্দুর রশিদের লাশের ময়নাতদন্ত করানো হবে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।