লন্ডনে মারা গেছেন প্রবীণ ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ প্রবীণ ভাষাসৈনিক এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী ১৯ মে সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

তার পরিবার ও লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন একথা জানিয়েছে।

গাফফার চৌধুরীর ছেলে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক অনুপম চৌধুরীর বরাত দিয়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র বাসসকে জানান, ‘তিনি শান্তিতে মারা গেছেন।’

কর্মকর্তা আরো বলেন, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ মিশন চৌধুরীর পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। তার দাফন ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে।

আব্দুল গাফফার চৌধুরী তার কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পরি?’ রচনার জন্য ব্যাপকভাবে সুপরিচিত।

বিবিসি বাংলা সার্ভিসের শ্রোতাদের জরিপে গানটি তৃতীয় সেরা বাংলা গান হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বৃটিশ শাসনামলে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত কারণে জনপ্রিয় এই সাংবাদিক ও কলামিস্ট বাংলাদেশর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

ব্রিটিশ শাসিত ভারতের জমিদার এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনকারী হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরীর ছেলে গাফফার ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানেই তিনি স্থায়ী হন।

তিনি প্রায়ই তার জন্মভূমিতে আসতেন এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতে নিয়মিত কলাম লিখতেন। আর এভাবেই তিনি তার প্রিয় বাংলাদেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে গেছেন।

গাফফার দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ঘটনার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ বজায় রাখতেন।

ব্রিটেনে যাওয়ার আগে গাফফার ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জয় বাংলা, যুগান্তর ও আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেন।

যুক্তরাজ্যে, গাফফার নতুন দিন নামে একটি সংবাদপত্র চালু করেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা জীবনে ‘ডানপিটে শওকত’, ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘নাম না জানা ভোরে’, ‘নীল যমুনা’, ‘শেষ রজনীর চাঁদ’ ও ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ এর মতো ৩৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নামের একটি ফিল্মও প্রযোজনা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেও বাংলা সাহিত্যের ভূবনে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি পদক, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পদক, সংহতি আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ডের পর গাফফার চৌধুরী স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান এবং ২২ বছর বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেননি।

তার স্ত্রী সেলিমা চৌধুরী লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান। এই দম্পতির চার মেয়ে ও এক ছেলে।সূত্র:বাসস।