জামালপুরে ছাত্রলীগের সম্মেলনে নানক বললেন, ‘ছাত্রলীগ স্বপ্নে পাওয়া কোনো মহৌষধ নয়’

বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আইনজীবী জাহাঙ্গীর কবীর নানক। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আইনজীবী জাহাঙ্গীর কবীর নানক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। এই ছাত্রলীগ স্বপ্নে পাওয়া কোনো মহৌষধ নয়। এই ছাত্রলীগ হঠাৎ করে গজে উঠেনি। কোন সামরিক ছাউনি থেকে আসা কোনো দল নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বড় অংশই হলো এই ছাত্রলীগ। যখন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য আর কোন দল ছিল না। তখন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় এবং নিয়ামক দায়িত্ব পালন করেছে এই ছাত্রলীগ।

তিনি ২৩ মার্চ দুপুরে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ মাঠে জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হলে তার মুক্তির জন্য রাজপথ কাঁপিয়ে দিয়েছিল এই ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ সত্তরের নির্বাচনে মানুষকে উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ করায় বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। এই ছাত্রলীগকে বারবার ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী ক্রান্তিকালে আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। কিন্তু এই ছাত্রলীগ কখনোই রাজপথ ছাড়ে নাই। এই ছাত্রলীগ বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের সাথে কোনো প্রকার বিশ্বাস ঘাতকতা করে নাই।

তিনি আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী সেই ছাত্রলীগের সম্মেলন সাত বছর পর হতে পারে না। এতে নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দিবে। ছাত্রলীগ আর ছাত্রলীগ থাকবে না। প্রতি বছর সম্মেলন শেষ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগের নেতাদের স্কুল কলেজে যেতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগকে জানতে হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে বর্তমান সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরতে হবে।

আওয়ামী লীগ নাকি দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ নাকি দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাস ঘাতকরা করেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তেব্যের জবাবে জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, মানুষ আমাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেনি। আমরাও মানুষের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করিনি। মানুষ আপনাদেরকেই লাল কার্ড দেখিয়েছে মির্জা ফখরুল সাহেব। আপনাদের তো আর নির্বাচন ভালো লাগে না। নির্বাচন কমিশন ভালো লাগে না। আপনাদের ভালো না লাগার রোগে পেয়েছে। মনে রাখবেন আগামী জাতীয় নির্বাচন সময় মতোই হবে। এক চুল সময়ও এদিক সেদিক হবে না। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং আপনারাও নাকে খত দিয়ে হয়তো সেই নির্বাচনে যাবেন।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিহাদুল আলম নিহাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ বিন জালাল প্লাবনের সঞ্চালনায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন এমপি, বেগম হোসনে আরা এমপি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান সরকার, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন প্রমুখ।

পরে বিকেল ৫টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। আগামী এক বছর মেয়াদী জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে খাবিরুল ইসলাম খান বাবুকে সভাপতি এবং নাফিউল করিম রাব্বীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। ২০১৫ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছিল। দীর্ঘ সাত বছর পর ২৩ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠিত হলো।