জামালপুরে শিশুর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও উন্নয়নে এপির ব্যবহারিক শিক্ষার সুফল

রান্নার পর শিশুদের খাবার পরিবেশন পর্যবেক্ষণ করছে উন্নয়ন সংঘের কর্মীরা।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: অপুষ্টির হাত থেকে শিশুদের রক্ষার স্বার্থে জামালপুরে উন্নয়ন সংঘ ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাস্তবায়নাধীন এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) এর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পুষ্টি উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এলাকার অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে পিডিহার্থ সেশনের মাধ্যমে পুষ্টিকর রান্না ও খাওয়ার নিয়ম জানার জন্য মা ও অভিভাবকদের নিয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ১২ দিনে শিশুর ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি অপুষ্টির ঝুঁকিমুক্তির লক্ষণ প্রতিফলিত হবার দাবি করেছে আয়োজক সংস্থা।

জামালপুর এপির কর্মএলাকায় ১২ দিনব্যাপী কার্যক্রমের শেষদিনে ব্যবহারিক শিক্ষার ফলাফল সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন এপিসি ম্যানেজার রাজু উইলিয়াম রোজারিও। এসময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের এরিয়া ম্যানেজার সাগর ডি কস্তা, উন্নয়ন সংঘের সহকারী পরিচালক কর্মসূচি মুর্শেদ ইকবাল, এপি ম্যানেজার মনিারা পারভীন প্রমুখ।

জামালপুর পৌরসভা, লক্ষ্মীরচর ও শরিফপুর ইউনিয়নের ৩১টি পিডিহার্থ সেশনের মাধ্যমে ৩১০ জন অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু ও তাদের মাদের ১২ দিনের এ কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হয়। শিশুর বয়স, ওজন শুরুর দিন পরিমাপ করে গুণ ও মান বজায় রেখে পুষ্টিকর খানার রান্না ও শিশুকে খাওয়ানো হয়। ১২ দিন শেষে দেখা যায় প্রতিটি শিশুর ওজন কমপক্ষে গ্রাম করে বেড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২৫০ গ্রাম মাপের বাটিতে ৬ থেকে ৮ মাস বয়সী শিশুকে ১২৫ গ্রাম খাবার দিনে দুইবার, ৯ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুকে ১২৫ গ্রাম খাবার দিনে ৩ বার এবং ১২ থেকে ২৩ মাস বয়সী শিশুকে ২৫০ গ্রাম বাটিভর্তি খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।

খাবার রান্না, পরিবেশন ও খাওয়ানোর সঠিক নিয়মের পাশাপাশি হাত ধোয়ার নিয়মসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা শিখানো হয়। মূলত খাদ্যাভ্যাস, শিশুকে লালন পালনের অভ্যাস, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যসেবা অভ্যাস মা বা অভিভাবকদের রপ্ত করতে ১২ দিন হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়।

উন্নয়ন সংঘের এপি ম্যানেজার মিনারা পারভীন বলেন, আমরা মাদের অভ্যাসটা শিখিয়ে দিলাম। এই অভ্যাস চর্চা অব্যাহত রাখতে পারলে এলাকার প্রতিটি শিশুর অপুষ্টির মারাত্মক ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা পাবে। অভিভাবকরা যাতে এ অভ্যাস ধরে রাখে এর জন্য এপির স্টাফরা পরিবারভিত্তিক নিয়মিত ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

শিশুর পুষ্টি উন্নয়নে খাবার রান্নাসহ অভ্যাস পরিবর্তনের ১২ দিনের হাতেকলমে শিক্ষার ব্যাপারে মাদের সাথে আলোচনা করছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন ও উন্নয়ন সংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মীগণ।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সভা সূত্রে জানা যায়, জামালপুর পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ড ও লক্ষ্মীরচর ও শরিফপুর ইউনিয়নে ৫ হাজার ২৩৩ জন শিশুর ওপর জরিপ চালিয়ে ২১৪ জন তীব্র মাত্রার পুষ্টিহীন, মাঝারী ৮৭১ এবং স্বল্প মাঝারী ১৪২৬ জন পুষ্টিহীন শিশু চিহ্নিত করা হয়। কর্মসূচির কৌশল অনুযায়ী বা নির্দেশনা অনুযায়ী এসব শিশুদের অভিভাবকদের নিয়ে পুষ্টিকর রান্না তৈরি এবং শিশুদের খাবরের পদ্ধতি শিখানো হয়। উল্লেখ সংস্থার পক্ষ থেকে এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে ইতিপূর্বে বাড়ির অঙ্গিনায় পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন শাকসবজির বীজ ও ফল গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া পুষ্টি বিষয়ে উপকারভোগীদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক কাজ পরিচালনা করা হয়।

শিশুদের মৌলিক চাহিদা পুরণের জন্যে খানার স্থায়ী আয়ের উৎসে সহযোগিতা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, ওয়াস, শিশু সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে জামালপুরে শুরু হয়েছে এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) নামে ১০ বছর মেয়াদী কর্মসূচি। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘ জামালপুরে এপি বাস্তবায়ন করছে।

সূত্র জানায়, উন্নয়ন সংঘ কর্তৃক এরিয়া প্রোগ্রামটি জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, শরিফপুর ইউনিয়ন এবং জামালপুর পৌরসভার ১, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩৯টি গ্রামে ২৩ হাজার ২৮২ জন উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। কর্মসূচির সকল কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার্যক্রমের মধ্যে জীবীকায়ন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ওয়াস এবং স্পন্সরশীপ অন্যতম। এরমধ্যে আবার খানা জরিপ, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ সম্মত গ্রাম প্রতিষ্ঠা, জিঙ্ক ধান উৎপাদন, অতিদারিদ্রের উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দল গঠন, সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো, প্রসবপূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিপদাপন্ন শিশুর তালিকা তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে হংকং ।