শেরপুরে আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দলীয় নেতার

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: শেরপুরের নকলায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এক সময় জামায়াতের হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম বদরুজ্জামান বদ্দী। তিনি উপজেলার ৭ নম্বর টালকি ইউপির আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। গেলবার তিনি ওই ইউপি থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এখন তার বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতাসহ আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন আকন্দ।

ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাসের পর শতশত ফেসবুক ব্যবহারকারী সেখানে পোস্টদাতার পক্ষে এবং বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছেন। এ ছাড়া ওই পোস্টটি শেয়ারও করেছেন অনেকে।

৩০ অক্টোবর সকালে পোস্টদাতা বেলায়েত হোসেন আকন্দের ফেসবুক পেজের স্টোরি অপশনে গিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়।

৭ নম্বর টালকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন আকন্দের ফেসবুকে পোস্ট করা বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো। তিনি লেখেন-

আমাদের ৭নং টালকী ইউনিয়নের গর্ববোধ করার মতো চেয়ারম্যান। তার দলের কিছু পরিচয় বলে দিচ্ছি। তার কিছু পরিচয় দিচ্ছি যেমন, উনি জামাত-শিবির করেছেন জিয়াউর রহমানের আমলে বিএনপি করে গ্রাম সরকার হয়ে ছিলেন। উনি জাতীয় পার্টি করেছেন জাতীয় পার্টির ভালো একজন নেতা ছিলেন। নালিতাবাড়ী আকমলের সাথে ফ্রিডম পার্টি করেছেন। উনার প্রথম নির্বাচন দাঁড়িপাল্লা নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। ২০১৫ সালে উনি আওয়ামী লীগের সম্মানিত সদস্য হন টালকি ইউনিয়নের। উনি যেহেতু অনেকটি দল করে এসেছেন, এজন্য নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগ উনাকে নৌকা প্রতীক উপহার দিয়েছিলেন। এরপর চেয়ারম্যান সাহেব বলতেন নৌকা বিক্রি হয় সেই দোকান আমার চেনা আছে। সে আবারও প্রমাণ করে দিলেন নৌকা দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।

উনি এই পাঁচ বছর চেয়ারম্যানি করে এমন কোন অপকর্ম নাই যে সে করে নাই। যেমন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার হত দরিদ্রদের মাঝে টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন। এই ঘর নিয়ে অনেক সাংবাদিকদের মাঝে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ঢাকা থেকে টিম এসেছিল নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জাহিদুর রহমান সাহেবকে নিয়ে এসেছিল সরোজমিনে তদন্ত করেন। যাহা এখনো বিচারাধীন চলমান অবস্থায় আছে। গত রমজান মাসের প্রথম দিনের রাত্রিবেলা জনগণ হাতেনাতে ধরে ফেলে, নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নকলা থানায় চাউলের বস্তা গুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে রাখেন। এর একটি দুদকে মামলা হয়েছে, মামলাটা চলমান অবস্থায় টাঙ্গাইল দুর্নীতি দমনে দুদকের হাতে আছে।

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পুঙ্গভাতা, মাতৃত্বভাতা, শিশু ভাতা, ভিজিডি কার্ড, ৪০ দিনের কর্মসূচি ৪০০০, ৫০০০টাকা নিয়ে অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করেছেন। দশ টাকা কেজি চাউলের কার্ড হতদরিদ্রদের মাঝে ৪ হাজার করে টাকা নিয়ে দিয়েছেন। যেকোনো ধরনের সালিশ করতে হলে উনাকে অগ্রিম টাকা দিতে হয়। এটাই হলো আমাদের ৭ নং টালকী ইউনিয়নের গর্ববোধ করার মতো চেয়ারম্যান জনাব বদরুজ্জামান বুদ্ধি ভাই।

এখন টালকি ইউনিয়নের ও জনগণের মাঝে প্রশ্ন যে আওয়ামী লীগ করে কি আমরা ভুল করেছি। এখন এর প্রভাব জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পড়বে।

ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে আবু রাইহান নামে একজন লেখেন, এই ব্যর্থতা আপনাদের। এতো দিন পর এইসব বললে জনগণ মানবে না। উনি যখন হাইব্রিড আওয়ামী লীগ তাহলে কেন গতবার তার পিছনে আপনারা টালকি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের লোকজন নির্বাচন করলেন ?

জে ইউ হিরা নামে এক কমেন্টকারী লেখেন, ভাই আপনার কথা সত্য, আপনার দুঃখটা বুঝতে পারছি।

খাইরুল ইসলাম নামে একজন লেখেন, নৌকাকে সস্তা বানিয়েছে নৌকার মাঝিরা, অতএব নৌকার মাঝি বদলাতে হবে।

এই স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় বেলায়েত হোসেন আকন্দের সাথে। এ সময় প্রকাশিত বক্তব্য তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেছেন উল্লেখ করে ওই আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বদরুজ্জামানের বিষয়ে যা লেখা হয়েছে তার কোনটাই মিথ্যা না। ওই বিষয়গুলো এলাকার সবাই জানে।

এক সময় দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বদরুজ্জামান বলেন, ওই সময়ে কোন রাজনৈতিক দলের নির্ধারিত প্রতীক ছিল না। ১৯৮৮-৮৯ সালে কেউ ঘোড়া, ছাগল, হারিকেন, চেয়ার ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করত। আমি দাঁড়িপাল্লা নিয়ে নির্বাচন করেছি। এর মানে এই নয় এটা জামায়াতের প্রতীক।

এছাড়া অন্যান্য অনিয়মের বিষয়গুলো তিনি অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ১৯৮৩-৮৪ সালে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে ৭নং টালকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব নেন। পরে ২০১৫ সালে আবারও সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করলে তাকে দলের সাধারণ সদস্য পদ দেওয়া হয়।