দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন খোলাবাড়ী-দেওয়ানগঞ্জ সড়ক

উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের কাজলাপাড়া থেকে নদীতে ধসে যাওয়া সড়ক। ছবিটি ২৯ আগস্ট সকালে কাজলাপাড়া এলাকা থেকে তোলা হয়েছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বিল্লাল হোসেন মন্ডল, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে খোলাবাড়ী-দেওয়ানগঞ্জ প্রধান সড়ক। এতে চরম বিপাকে পড়েছে বাহাদুরাবাদ নৌথানাসহ ১০ হাজার মানুষ। নদী ভাঙ্গনের হুমকীর মধ্য রয়েছে ১০টি গ্রাম।

জানা গেছে, সড়কটি গত তিন বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে ছিল। সময়নুযায়ী নদী ভাঙ্গন পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী ৫ মিটার পাকা সড়ক নদের গর্ভে বিলীন হয়ে উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়ক দিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছে বাহাদুরাবাদ নৌথানা পুলিশসহ হাজার হাজার পথচারী মানুষ। দীর্ঘদিন থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে চিকাজানি খোলাবাড়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মসজিদ মাদরাসা, বাজারসহ ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের পরিবার। চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশানি, জিঞ্জিরামের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার চুকাইবাড়ী, চিকাজানি, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙ্গা, চরআমখাওয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকা ও সড়ক ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। যমুনা বিপদ সীমার ১৩ সেন্টিমিটিার ওপর দিয়ে প্রবাহিত থাকায় উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও পৌর শহরের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক জানান, বাহাদুরাবাদ নৌথানা, খোলাবাড়ী, মোন্নে বাজার, ফারাজি পাড়া, কাজলা পাড়া, মন্ডল বাজার, গুচ্ছগ্রাম, বাহাদুরাবাদসহ ১০টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি গত দুবছর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙ্গনের পরে থাকলেও নদী ভাঙ্গন রোধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মন্ডল বাজার এলাকাবাসী জানান, ২০২০ সালে সড়কটি প্রথম ভাঙ্গন শুরু হয়, চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে বর্ষা মৌসুমের প্রথমে নদী ভাঙ্গন শুরু হলে স্থানীয়ভাবে কিছু বালির বস্তা এবং বাঁশ দিয়ে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। কিংবা স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। এ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই অবিরাম বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এই সড়কটি ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সড়কের এক পাশ দিয়ে যতটুকু মাটি রয়েছে সেখান দিয়ে পায়ে হেটে বহুকষ্টে চলাচল করছে লোকজন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়রা অভিযোগ করে চরম অবহেলার কারণে সড়কটি রক্ষার কোন ব্যবস্থা কেউ গ্রহণ করেনি। সেজন্য এই জনপদের মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কটি এখন বিচ্ছিন্ন।

চিকাজানি ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজউদ্দিন আহাম্মেদ জানান, অনেক চেষ্টা করেও সড়কটি ব্রহ্মপুত্র ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা গেল না। এলজিইডি আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রশি টানা টানিতেই সড়কটির বেহাল অবস্থা। আমি এই সড়কটির সংস্কারের জন্য সব দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন জানান, দুই বছর থেকে এই সড়কটি নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে। গত বছর তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয়দের দিয়ে বাঁশ ও বালির বস্তা ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে এ বছর হঠাৎ করে বৃষ্টির পানিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ জানান, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সড়ক বিচ্ছিন্ন হবার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই সড়কটি মেরামত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আপদকালীন বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে নদীর তীর সংরক্ষণে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে নেওয়া হবে।