বাংলাদেশে ‘মিনিকেট’ জাতের কোন ধান নেই : কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত

হারভেস্টপ্লাস বিংগস প্রকল্প আয়োজিত কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাখাওয়াত ইকরাম। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আজ পর্যন্ত মিনিকেট জাতের কোন ধান উদ্ভাবন করেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও মিনিকেট জাতের কোন ধান নেই। তাই বাংলাদেশে মিনিকেট জাতের কোন ধানও নেই, চালও নেই। তবে ভারত সরকারের কৃষিবিভাগ তাদের ধান উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সে দেশের ধানচাষীদের মাঝে সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণের প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়, তারা সেটাকে ‘মিনিকিট’ বলে থাকে। সেই মিনিকিট শব্দটাকে পুঁজি করেই হয়ত বাংলাদেশে মিনিকেট চাল শব্দটা প্রচলিত করেছেন কতিপয় অসাধু চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

২৩ ডিসেম্বর দুপুরে জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদের প্রকৌশলী মোজাফফর হোসেন অডিটরিয়ামে বাংলাদেশে জিঙ্কসমৃদ্ধ বিভিন্ন জাতের ব্রি-ধান, গম, মসুর ডালের চাষাবাদ বৃদ্ধি এবং সরকারি ক্রয় ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় জিঙ্কসমৃদ্ধ ফসল অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হারভেস্টপ্লাস-বিংগস প্রকল্প আয়োজিত কর্মশালায় কথিত ‘মিনিকেট’ চাল প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরেন জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাখাওয়াত ইকরাম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে হারভেস্টপ্লাসসহ ওয়ার্ল্ডভিশন, উন্নয়ন সংঘ এবং ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ জামালপুর জেলায় বিংগস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

কর্মশালায় কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত ইকরাম বলেন, বাংলাদেশের কতিপয় অসাধু চালকল মালিক অধিক মুনাফা লাভের আশায় কথিত এই ‘মিনিকেট’ চালের ব্যবসা করছে। তারা বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত চিকন ও মোটা জাতের বিভিন্ন ধান বা হাইব্রিড জাতের বিভিন্ন ধান চালকলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছাটাইবাছাই করে চালের একটা বিশেষ আকার তৈরি করে সেই চালকেই মিনিকেট নাম দিয়েছেন। তারা আকর্ষণীয় মোড়কে বাজারে এবং বড় বড় শহরের শপিংমলে বাজারজাত করে চড়া মূল্যে এই মিনিকেট চাল বিক্রি করছে। চালকলে বিশেষ মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করার কারণে সুন্দর দেখা গেলেও প্রচলিত সাধারণ ধানের চালের মতো পুষ্টিগুণ কথিত ‘মিনিকেট’ চালের ভাতে থাকে না। এই কথিত ‘মিনিকেট’ জাতের কোন ধান ভারতেও উদ্ভাবিত হয়নি।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু মিনিকেট জাতের কোন ধান আজো উদ্ভাবন হয় নাই, তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে যে এই দেশের কতিপয় অসাধু চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা কথিত ‘মিনিকেট’ চালের ব্যবসার নামে সবাইকে ঠকাচ্ছে। এই মিনিকেট চালের কারণে দেশীয় জাতের ধানের চালও একদিকে বাজার হারাচ্ছে ও ক্রেতারা ঠকছেন। অন্যদিকে চটকদার পুষ্টিগুণহীন কথিত ‘মিনিকেট’ চালের ভাত খেয়েও অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশে প্রচলিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের মাধ্যমে মিনিকেট চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হবে।

কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জিঙ্কসমৃদ্ধ বোরো মওসুমের ব্রি ধান ৭৪ ও ৮৪ এবং আমন মওসুমের ব্রি ধান ৬২, ৭২ ও ২০ জাতের ব্রি-ধানসহ বিভিন্ন জাতের জিঙ্কসমৃদ্ধ গম ও মসুর ডাল দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদ হচ্ছে। নারী-পুরুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খাদ্যতালিকায় জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান, গম ও মসুর ডালের ব্যবহার বাড়াতে হবে। জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে সরকারের কৃষি বিভাগ দেশের কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে।