রাষ্ট্র কি পারেনা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভিভিআইপি মর্যাদা দিতে?

দীর্ঘদিন যাবত জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত আর্থিক সামর্থ্যহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন কুমার দে।

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

সরকারের কাছে মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার সকল ব্যয় বহন ও ভিভিআইপি মর্যাদার দাবি জানিয়েছেন শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম হিরু। দীর্ঘদিন যাবত জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত আর্থিক সামর্থ্যহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন কুমার দে’ কে দেখতে গিয়ে ১৭ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিজের টাইমলাইনে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি জানান। ১৮ ডিসেম্বর সকালে তার টাইম লাইনে গেলে এসব তথ্য জানা যায়।

ওই স্ট্যাটাসে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রাষ্ট্র কি পারেনা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার সকল ব্যয় বহন করতে ? রাষ্ট্র কি পারেনা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভিভিআইপি মর্যাদা দিতে ? এরকম চন্দনদের বীরত্বের কারণেই আজকের এই লাল-সবুজের পতাকা ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এদেশ কি জিকে শামিম, সম্রাট, সাহেদ, গোল্ডেন মনির, পাপিয়াদের মত দুষ্টু চক্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করা হয়েছিলো? এর জন্যই কি প্রায় ৩০ লাখ শহীদের তাজা রক্ত এবং প্রায় আড়াই লাখ মা-বোনের পবিত্র সমভ্রম হারাতে হয়েছিলো?

নিচে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম হিরুর নিজের টাইম লাইনে পোস্ট করা স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী চন্দন কুমার দে, পিতা- স্বর্গীয় সুরেন্দ্র চন্দ্র দে, গ্রাম- চরমধুয়া, ইউনিয়ন- চন্দ্রকোনা, উপজেলা- নকলা, জেলা- শেরপুর। বর্তমান ঠিকানা- রাজবল্লভপুর, শেরপুর টাউন, শেরপুর। ওনার কল্যাণ ট্রাষ্ট (ভারতীয়) নম্বর- ১৫৯০০, লাল মুক্তিবার্তা-০১১৪০৩০২৯৯, গেজেট নম্বর- ১০৮৯। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কিডনি রোগে আক্রান্ত। ডায়ালাইসিস করতে হতো। আর্থিক সামর্থ্য নেই। বেশ কিছুদিন যাবত সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় বাসায় শুয়ে আছেন। কোনকিছুই খেতে পারছেন না। কথা বলতে পারেন না, চোখও খোলেন না। আজকে আমি দেখতে গিয়েছিলাম। ওনার স্ত্রী বললেন, সারাদিনে শুধুমাত্র একটু জল বা ফলের রস মুখে দেওয়া হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার একটি অসাড় দেহ বিছানায় পড়ে আছে। শুধুমাত্র শ্বাস প্রশ্বাসটা চলছে। ৭১ এর বীর সেনানী আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। যেকোন মূহুর্তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের টগবগে তরুণের এই করুণ দৃশ্য দেখে আমার মনে হলো- আমাদের প্রত্যেকের পরিণতি কোন একদিন এরকমই হবে। কারণ ৯৫% অজপাড়া গাঁয়ের হতদরিদ্র পরিবারের অশিক্ষিত সন্তানরাই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমিও তাদের একজন। রাষ্ট্র কি পারেনা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার সকল ব্যয় বহন করতে? রাষ্ট্র কি পারেনা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভিভিআইপি মর্যাদা দিতে? এরকম চন্দনদের বীরত্বের কারণেই আজকের এই লাল-সবুজের পতাকা ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এদেশ কি জিকে শামিম, সম্রাট, সাহেদ, গোল্ডেন মনির, পাপিয়াদের মত দুষ্টু চক্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করা হয়েছিলো? এর জন্যই কি প্রায় ৩০ লাখ শহীদের তাজা রক্ত এবং প্রায় আড়াই লাখ মা- বোনের পবিত্র সমভ্রম হারাতে হয়েছিলো?

স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে তালাত মাহমুদ নামে একজন লেখেন, যাদের বুকের পাঁজর ভেঙ্গে গড়েছে তোদের অলঙ্কার/তাঁদের কেন করিসরে হেলা দিসনে কেন অধিকার?

জাহিদুল ইসলাম সজিব নামে একজন লেখেন, দেশ এখন চোরদের দখলে, মুখে সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বাস্তবে ভিন্ন চিত্র. মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, জামুকা এদের মত প্রতিষ্ঠান রেখে লাভ কি. যারা নীতি নির্ধারন ভূমিকা পালন করার কথা ছিল এরা চলে উল্টো দিকে….. স্বাধীনতার ৫০ বছরে একজন মুক্তিযুদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে জাতীর জন্য কতো লজ্জার…..

এমডি কুদরত উল্লাহ লেখেন, স্যার, সরকার সবই পারে। তবে আমাদের ব্যবস্থাপনায় সরকারের নিকট সঠিক খবর পৌঁছে দেওয়ার সরাসরি কোন মাধ্যম নাই! আপনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আবেদন করতে হয়!! আমার মতে সদাশয় সরকারে উচিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ জরুরী প্রয়োজনের জন্য, সরকার ৬৪ জেলা কমান্ডারদের (সপ্তাহে অথবা মাসে তিন মাসের বেশী নয়) সাথে এক ঘন্টার মিটিংয়ের ব্যবস্থা রাখা, যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃখের কথাগুলো শোনে সহায়তা দেওয়া যায়। মুক্তিযোদ্ধারা এখন দেশকে কিছু দিতে পারবেনা, সেটা বয়সের কারণে। এই যোদ্ধারাই নিজের জীবন দান করার প্রতিজ্ঞা করেছিল, এদেশ স্বাধীন করার জন্য এবং আল্লাহর রহমতে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। স্যার, বেশি বলে ফেললাম।

মিঠুন কোচ নামে আরেকজন লেখেন, এটাই তো বাঙ্গালীর স্বভাব। দাঁত থাকতে দাঁতের কোন মর্যাদা নেই। যখন কোন মহান ব্যাক্তি বেঁচে থাকে তখন সমাজে তার কোন মূল্য নেই। যা মূল্য তার সব টুকুই মারা যাবার পর। আহারে লোকটা ভালো ছিল, স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন দিয়েছিল। পত্রিকা, অনলাইন নিউজ, টকশো, ডকুমেন্টারি এসব তার চলে যাবার পরই হয়।

হায়দার আলী নামে অপর আরেকজন লেখেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এমন করুন শেষ বিদায়ের অপেক্ষা খুবই দুঃখজনক। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনকও বটে। এর ব্যতিক্রম হওয়া অত্যাবশ্যক।