সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ও ব্র্যাকের সমঝোতা স্মারক স্মাক্ষর

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : লাদেশে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে সহযোগিতার লক্ষ্যে ২৪ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক ও ব্র্যাকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অংশীদারিত্বের অধীনে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

বিশ্বব্যাংক ও ব্র্যাকের অংশীদারিত্বে এই যৌথ উদ্যোগের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগামী দশকের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, সড়কে চলাচলকারীদের মধ্যে আরো অধিকতর সচেতনতা ও নিরাপদ আচরণ, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং আরো ভালমানের সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

কাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, তার মন্ত্রণালয় নারী চালকদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানে পূর্ণ সহায়তা দেবে।

‘সড়ক নিরাপত্তা সহযোগিতা: ২০৩০ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০% হ্রাসকরন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশদারিত্বের অংশ হিসেবে ৪৮ কিলোমিটার যশোর-ঝিনাইদহ করিডোর বরাবর সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতামূলক প্রচারণাও শুরু করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই প্রচারণাটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘ইউ কেয়ার’ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হবে। ২০২০ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। বিদ্যমান দুই লেনবিশিষ্ট মহাসড়ক, ভোমরা-সাতক্ষীরা-নাভারন এবং যশোর-ঝিনাইদহ সড়ককে একটি নিরাপদ ও চার লেনবিশিষ্ট মহাসড়কে উন্নীত করা এ প্রকল্পের লক্ষ্য।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গণপরিবহণ ব্যবস্থায় নারীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং নারী চালকসহ চালকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্র্যাক ও বিশ্বব্যাংক অংশীদার হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছে।

ব্র্যাকের ড্রাইভিং স্কুলের উদ্যোগে ‘উইমেন বিহাইন্ড দ্য হুইলস’ প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২১৪ জন নারীকে পেশাদার চালক হিসেবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৩৫ মিলিয়ন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়।

বাংলাদেশ ও ভূটানের দায়িত্বে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর দানদান চেন বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা যে কোন দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।’

বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা জাতীয় নিরাপদ সড়ক কর্মসূচির মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত উন্নত নিরাপত্তার জন্য সরকারের অঙ্গীকারের অংশ হতে পেরে গর্বিত। ব্র্যাকের সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের নগর ও পল্লী এলাকায় সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা জোরদার করবে।’

এই সহযোগিতা সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা হ্রাসে সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে পারস্পারিক জ্ঞান বিনিময় ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

২০১১ সাল থেকে ব্র্যাকের কমিউনিটি রোড সেফটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের আওতায় ১.২ মিলিয়নের বেশি লোক নিরাপদে কিভাবে সড়কে চলাচল করতে হয়, সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। অধিকন্তু, ৫ হাজার ৪৫১ জন স্কুল শিক্ষক ও ৪ লাখ ৯৮ হাজার জন স্কুল শিক্ষার্থী সড়ক নিরাপত্তার ওপর বিশেষ সচতনতামূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ব্র্যাক ও বিশ্বব্যাংকের এই যৌথ উদ্যোগ প্রকল্প এলাকায় সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৫০% হ্রাস করার টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে আরো ব্যাপকভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের লক্ষ্যে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি সংস্থাসমূহ এবং বিশেস করে নাগরিকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাস্তবায়িত যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের মতো দেশের অন্যান্য মহাসড়কগুলোতেও এ ধরনের আরো কমিউনিটি পরিচালিত সচতনতামূলক পদক্ষেপ সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’