বকশীগঞ্জে দুই শিশুর মৃত্যু, চিকিৎসককে মারধর, সাংবাদিকের ফোন সেট ভাংচুর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে সিয়াম (১১) ও জান্নাত (৬) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ৪ আগস্ট সকালে উপজেলার নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের ঝালোপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাদেরকে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত ঘোষণা করাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তুমুল হট্টগোল ও দু’জন চিকিৎসককে মারধর এবং স্থানীয় একজন সাংবাদিকের ফোন সেট ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বকশীগঞ্জ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের ঝালোপাড়া গ্রামের শিশুরা বাড়ির কাছেই একটি পুকুরে দলবেঁধে গোসল করতে নামে। এ সময় স্থানীয় আফাজ উদ্দিনের ছেলে সিয়াম ও মো. রাশেদের মেয়ে জান্নাত পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। অন্যান্য শিশুরা নিখোঁজ দুই শিশুর স্বজনদের জানালে তারা পুকুরে নেমে সিয়াম ও জান্নাতকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে বেলা সোয়া ১২টার দিকে দুই শিশুকে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক নাজিম শাহরিয়ার শিশু দুটির শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ শেষে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে বলে শিশু দুটির স্বজনদের জানান।

এ সময় শিশু জান্নাতের বাবা মো. রাশেদ শিশু দুটি মারা যায়নি বলে দাবি করে তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসা করার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের চাপ সৃষ্টি করেন। এ নিয়ে তর্কের একপর্যায়ে ওই শিশুদের স্বজনরা শিশু দুটিকে মৃত ঘোষণাকারী চিকিৎসক নাজিম শাহরিয়ার ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) আবুল কালাম আজাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে মারধর করেন। এ সময় ভোরের কাগজের স্থানীয় সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম রনি ছবি তুললে তার অ্যানড্রয়েড ফোন সেট কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে বিক্ষুব্ধ রাশেদ। ওই দুই চিকিৎসক হাসপাতালেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। খবর পেয়ে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে শিশু দুটির মরদেহ তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বকশীগঞ্জ হাসপাতালের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক প্রতাপ কুমার নন্দী এ প্রতিবেদককে বলেন, পানিতে ডুবে গুরুতর অসুস্থ শিশু দুটিকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করেই মৃত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মৃত শিশুদের স্বজনরা জোর করেই বলার চেষ্টা করছিল যে তারা মারা যায়নি। তারা আমাদের কথার কোনই কর্ণপাত করছিলেন না। একপর্যায়ে মৃত শিশু দুটির স্বজনরা আমাদের দু’জন ডাক্তারকে মারধর করেন। পরে পুলিশ এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। দু’জন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বকশীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হবে।

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, মৃত দুই শিশুর পরিবারের লোকজনদের হাতে হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসক মারধর ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় বকশীগঞ্জ হাসপাতালের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক প্রতাপ কুমার নন্দী লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে চেয়েছেন। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।