বাঁশচড়ায় মাদরাসার মাঠ উঁচুকরণ প্রকল্পের ২৪ টন গম আত্মসাতের অভিযোগ

ঝাওলা নালিখালী নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। এই প্রতিষ্ঠানের মাঠউচুকরণ প্রকল্পের ২৪ টন গম আত্মসাত। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সদরের ঝাওলা নালিখালী নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার মাঠ উঁচুকরণ প্রকল্পে কাবিখা কর্মসূচির বরাদ্দের ২৪ মেট্রিক টন গম আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রকল্প কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও মাদরাসা কমিটির সভাপতি ব্যতীত অন্যান্য সদস্যরা।

জানা গেছে, সদরের বাঁশচড়া ইউনিয়নে ঝাওলা নালিখালী নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানাটি স্থাপিত হয় ২০১৭ সালে। বিগত দিনে মাদরাসার মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে কোন আবেদন করেননি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের খোকা স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বিলাল উদ্দিনকে সভাপতি করে এই মাদরাসা ও এতিমখানার মাঠ উঁচুকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাউকে না জানিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি ভুয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি জমা দিয়ে কাবিখা’র ২৪ টন গম বরাদ্দ পান। গম বরাদ্দের বিষয়টি গোপন রেখে আবুল খায়ের খোকা ও ইউপি সদস্য বিলাল উদ্দিন গত মে মাসে একদিনে সামান্য কিছু মাটি কেটে তার ওপর ঘাস লাগিয়ে দেন। অথচ প্রকল্পের শর্তানুযায়ী মাঠ তিন ফুট উঁচু করার কথা ছিল।

বিষয়টি মাদরাসা কমিটি ও স্থানীয়দের নজরে এলে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মাদরাসার নামে কাবিখা প্রকল্পের ২৪ টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন গত ৩৩ হাজার টাকা দরে ২৪ টন গমের মূল্য দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কিন্তু মাঠে লোকদেখানো কিছু মাটি কেটে ভুয়া শ্রমিকতালিকার মাস্টাররুল জমা দিয়ে গত জুন মাসের মধ্যেই বরাদ্দের সমুদয় গম উত্তোলন করে টাকা আত্মসাত করেন। এ নিয়ে মাদরাসা কমিটির সভাপতি ব্যতীত সকল সদস্য ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. খায়রুল বাশার পিন্টু সদরের ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করে মাদরাসার বরাদ্দের ২৪ টন গম আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। একইভাবে স্থানীয় জামিরা গ্রামের মো. আনোয়ার সাদাত জানতেন না যে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটিতে সম্পাদক হিসেবে তারও নাম আছে। কমিটিতে তার নাম দিয়ে ভুয়া স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তিনিও সদরের ইউএনওর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি বরাদ্দে মাদরাসার উন্নয়ন কাজ হবে মাদরাসা কমিটি জানবে না, এটা তো হতে পারে না। ২১ জুলাই স্থানীয় বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে মাদারসা কমিটির এক সাধারণ সভায় উপস্থিত সবাই মাদরাসার উন্নয়নের নামে ২৪ টন গম আত্মসাতের বিচার চেয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

তবে বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের খোকা বলেন, আমি বা এই প্রকল্প কমিটির কেউ গম বিক্রির একটি টাকাও আত্মসাত করিনি। প্রকল্প কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য বিলাল উদ্দিনকে দিয়ে আমি মাদরাসা মাঠে মাটিভরাট কাজে ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় করেছি। শুকনো মওসুমে মাঠভরাট করে দেওয়ার কথাও দিয়েছি।

মাঠভরাট প্রকল্প কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মো. বিলাল উদ্দিন বলেন, মাটি পাওয়া যায় নাই বিধায় কাজ বন্ধ রাখছি। কারও স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্প কমিটি জমা দেই নাই।

এ প্রসঙ্গে জামালপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে মাদরাসাটির মাটিভরাট প্রকল্প কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বিলাল উদ্দিন কাজ না শেষ করেই মাটিকাটা শ্রমিকদের যে তালিকা জমা দিয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সাথে প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী মাদরাসার কমিটির লোকজনদের সাথে নিয়ে মাঠে তিন ফুট উঁচু করে মাটি ভরাট করে দেওয়ার জন্য আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এই সময়ে মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করা হলে প্রকল্প কমিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।